নেত্রকোনা: মুজিব বর্ষে দেয়া প্রধানমন্ত্রী’র উপহার পেলে শেষ বয়সে নিজের একটি ঘর হবে। তখন স্বাধীনভাবে হাঁটাচলা করে নিজের মতো করে বাঁচা যাবে। 

এমনটাই ছিলো নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের বাউসাম গ্রামের ৯০ ছুঁইছুঁই বয়সী ভিক্ষুক বৃদ্ধা ফশর বানু’র মনের সুপ্ত বাসনা।

প্রধানমন্ত্রী’র দেয়া মুজিব বর্ষের ঘর পাওয়ার বাসনা পূর্ণ করতে কার্পণ্য করেননি তিনি। ভিক্ষাবৃত্তি ও বয়স্ক ভাতা থেকে প্রাপ্ত জমানো অর্থের সবটুকু ভাতিজা জসিম উদ্দিনের হাতে তুলে দিয়েছেন।

জসিমের  মিথ্যে আশ্বাস ও প্রতারণার খপ্পরে পড়েই এমনটি করেছেন ফশর বানু। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সর্বস্ব হারিয়ে ফতুর হয়ে গেলেন তিনি। এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত জীবনে তার সম্বল শুধু দু চোখের পানি…

ভাতিজা জসিম যদিও মিথ্যে আশ্বাসে শেষ ধাপে ফশর বানু’র কাছ থেকে নিয়েছিল নগদ ২৫ হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে এছাড়াও পূর্ববর্তী সময়েও বিভিন্ন ধাপে দেয়া হয়েছে আনুমানিক ৩০/৩৫ হাজার টাকা।

ভাতিজা জসিম বলেছিল টাকা দিলেই ফশর বানু পাবেন প্রধানমন্ত্রী’র উপহার মুজিব বর্ষের ঘর। কিন্তু ঘর তো মেলেনি ভাগ্যে জুটেছে গলাধাক্কা আর লাঞ্ছনা।

এখন টাকা উদ্ধার আর মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের আশায় দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন ভিক্ষুক অসহায় বয়োবৃদ্ধা ফশর বানু। এলাকাবাসীসহ উপজেলার খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হকের কাছে বিচার প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি।

এলাকাবাসী মিজানুর রহমান, কাউসার আলী ও রেহেনা বেগমসহ ভুক্তভোগী বৃদ্ধা’র দাবি চেয়ারম্যান পদক্ষেপ নিলেও জসিমের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়নি। টাকা চাইতে গেলে বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় সে। উপায়ন্তর না দেখে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চেয়ারম্যান বৃদ্ধাকে থানায় যাবার পরামর্শ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফশর বানু থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

অপরদিকে থাকার জায়গা না থাকায় আশ্রয়হীন বৃদ্ধা ফশর বানুকে আশ্রয় দেন বাউসাম গ্রামেরই বাসিন্দা দারগ আলী। সেখানেই প্রতিবেশীর দয়ায় দিনযাপন করছেন ফশর বানু। ফতুর হওয়ার দুঃখ সইতে না পেরে এবং বিচারের আশায় প্রতিদিন আহাজারি করছেন তিনি।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই জসিমের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করতে না পারা ও বাড়িঘর না চেনার কারণে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে একাধিক এলাকাবাসী জানিয়েছেন অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান বারংবার সামাজিকভাবে বসলেও কাজ হয়নি।

এদিকে জসিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের একটি কপি বাংলাদেশ দর্পণের হাতে এলেও থানায় প্রাপ্তির সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে বারংবার ফোন করেও কলমাকান্দা থানার অফিসার ইন-চার্জ মো. আব্দুল আহাদ খানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

নয়ন বর্মন, নেত্রকোনা প্রতিনিধিবাংলাদেশ দর্পণ