১. আমার জানা ছিল না

আমার জানা ছিল না!
একটা সন্ধ্যা পানকৌড়ির ডানার কাছে  হেরে যাওয়াতে সুখ এতাে গাঢ় হয়। এভাবেও কাঁচভাঙ্গা সময়ের ক্লান্তি মুঠো ভরে ;
খৈ - এর মতাে উড়তে উড়াতে নিঃশেষ হওয়া যায়।
আমার জানা ছিল না!
তীব্র আন্দোলিত ঘ্রাণে
মেহগনির  ফুলের মতাে ইচ্ছে করে মরে যাওয়া যায়।
চাইলে, নারিকেলের পাতায়;
ধূসর আকাশ দেখে অনিন্দ্য মােত্রার ফুল হওয়া যায়।
আমার জানা ছিল না
ভয়ার্ত ইলিশের লেজুর গােধূলিতে-
পুঁইয়ের মতাে লাল হওয়া যায়।
বকের পালকের মতাে বক ফুল এঁকে এঁকে;
ভরিয়ে দেওয়া যায় প্রিয় স্মৃতির কভার। আমার জানা ছিল না
সাদা ভাত মুখে নিয়ে চিৎপুঁটির মতাে- সন্ধ্যা বাতির রসদ হওয়া যায় পাটখড়ির ঘরে।
অনুভবে ভেসে প্রিয়জন হারানাে সন্ধ্যার পুকুরে-
মেদহীন কলমি লতার কুঁশি হওয়া যায়।
আমার জানা ছিল না!
তীব্র মন খারাপের সন্ধ্যায় মায়ের শাখায় ; বাবার যন্ত্রণা দেখতে পাওয়া যায়। এভাবেও বেচে থাকা যায় ,
লাল মােরগের নখের আঁচড় খেয়ে;
ফানুশ হয়ে উড়ে যাওয়া যায়।

 

২. মস্তিষ্কের ধূলো

বালিশ, মস্তিষ্ক পড়ে আতৎকে উঠে
ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে হাঁটা পিঁপড়ের বহরে
কি যেন খুঁজে পায়
হয়তো ঘন হ'য়ে আসা খেজুরের রসে
সে-আটকে পড়া একটা মাছি খুঁজে পায়
যার চোখে বেঁচে থাকার ঢেঁকুর বমি হয়ে নেমে আসে
পাহাড়ি ঝিরিতে ডাহুক উড়াল শীতে।
আমি জানি না,
সে বুঝতে  পারে কিনা
সমুদ্র ঢেউে ভেসে আসা শ্যাওলা ধরা মৃত কাছিমের সমুদ্রে ফিরে যাবার আক্ষেপ
কিংবা  ডাবের খোসার ভিতর আটকে পড়া  লাল কাঁকড়ার নিরন্তর  ছোটাছুটি?
সত্যি আমি জানি না
বালিশ কতোটুকু আমার মস্তিষ্ক পড়ে নিতে পারে
কতোটুকু, কতোটুকু
যতোটুকু আলো দেখে মাঝিমাল্লা বুঝে নিতে পারে কূল দূরে নহে।
এইসব কথা   অজান্তেই আমাকে খেপাটে মহিষ করে দেয় ; দুপুরের আকাশ মাথায় নিয়ে  হাহাকারের ধূলো উড়াই পৃথিবীর বাতাসে; সুলতানের ছবির চরিত্র হয়ে দেখি সভ্যতার অপরিণত কংকাল।
শুধুই মনে হয়
অতীত কল্পনায় আটকে পড়া ক্লান্ত লাল কাঁকড়ার মতো
কতকিছুই না করার বাকী থেকে গেল
রয়ে গেল ভুবন চিলের ডানায় সরিষার হলুদ পাপড়ি মাখিয়ে  একটা সন্ধ্যা দেখার আক্ষেপ।
তবে কি জীবন  শুধু অপচয়, শুধু অপচয় নাগরিক আড্ডা?
তা কি করে হয়?  মানুষ তো পড়তে শিখেছি সেখানেই,
নিঃসঙ্গ বিড়ালের মতো কয়েকটি শব্দ থাবায় ধরে লিখতে শিখেছি সাঁতার কাটা হাঁসের পালকের সৌন্দর্য।
তবুও তো কথা থাকে বাকি
কতোটুকুই বা আঁকি
যা হারানোর ভয়ে কুঁকড়ে মুকরে আছি
তবুও তাই নিয়ে রোজ বাঁচি।

 

৩. চিত্রকল্প

সে এক ভয়ানক চিত্রকল্প
গন্ডার দৌড়ে যাচ্ছে-মহাসড়ক ধরে।
জড় সদৃশ আমি তুমি আমরা
ঘামে ভেজা শার্ট উঁচিয়ে বাতাস লাগাই
জাতীয় পরিচয়পত্রের কিম্ভূত;
অথচ নিঃশ্বাস নেয় এমন একটা শরীরে।
আমি ভুলে যাই আমড়া বিক্রেতা কখন লোকাল গাড়িতে উঠে; কখন
আমড়া আমড়া বলতে বলতে আমরা বানিয়ে ফেলে
আমি টের পাইনা
অথচ প্রকট সত্য হচ্ছে এই,
আমরা কখনোই আমরা হয়ে উঠি না;
আমড়াই হয়ে উঠি; ঝুলে থাকি ব্যানারে ফেস্টুনে; লজ্জাহীন এক মুখ।
একটু লবণ -স্বাদমতো; মানিয়ে গিলে ফেলতে শিখি নাগরিক অবজ্ঞা
শহুরের রাস্তায় গন্ডার ভোঁ দৌড় দেয়
আমরা দাঁড়িয়ে আছি; থাকবো
-যেন জিরাফ; আমাদের লম্বা গলা বুঝি
আকাশ না দেখতে দেখতে ক্লান্ত; চৌচির জমির  আইল।
তবুও আমাদের আত্মা কখনও চিৎকার করে বলে উঠে না
"এইসব  শাউয়ার উন্নয়ন আমারে দ্যাখানো  লাগবো না।"
যদি পারো গন্ডার শূন্য একটা শহরের রাস্তায় আমাকে একটু নিঃশ্বাস নিতে দাও;
আমার ফুসফুস ভর্তি করে দাও ফুলের রেণু মাখা বাতাসে।
এক ভয়ানক চিত্রকল্প
গন্ডার দৌড়ে যাচ্ছে-মহাসড়ক ধরে।
জড় সদৃশ আমি তুমি আমরা
ঘামে ভেজা শার্ট উঁচিয়ে বাতাস লাগাই
জাতীয় পরিচয়পত্রের কিম্ভূত;
অথচ নিঃশ্বাস নেয় এমন একটা শরীরে।
সে এক ভয়ানক চিত্রকল্প
গন্ডার দৌড়ে যাচ্ছে-মহাসড়ক ধরে।
জড় সদৃশ আমি তুমি আমরা
ঘামে ভেজা শার্ট উঁচিয়ে বাতাস লাগাই
জাতীয় পরিচয়পত্রের কিম্ভূত ;
অথচ নিঃশ্বাস নেয় এমন একটা শরীরে।

 

৪. শুভ যাত্রা

শুভ যাত্রায় উঠে পড়ি আমি
গন্তব্য শহরের লেজুড় শেষে
দিগন্ত উজাড়  কবুতরের আকাশে ।
ঝিমিয়ে পড়ছি আমি কিছু ক্ষণ বাদে বাদে
যেন শরীর তার প্রতি অবহেলার শোধ নিচ্ছে দিনশেষে
তবুও দৌড়ে যাচ্ছে একটার পর একটা স্টপেজ ;
কিছু মুখ, কিছু জীবন।
যাত্রীরা নামছে, উঠছে
হেলপার এর সাথে তর্ক, হাতাহাতি, গালাগাল
আরও কত জৈবিক খুনাখুনি।
তবুও আমার চোখকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি মানুষের ভীড় ; গভীর এক বিচ্ছিন্নতা আমি আয়ত্ত করেছি বহুদিনের প্রচেষ্টায়।
হেলপার যখন ভাড়ার জন্য ডাকে
আমার লোম সজারুর কাঁটার মতো জেগে উঠে তাকাই, যেন সদ্য জন্মানো শিশু এক আমি
পৃথিবীর প্রতি নেই কোন মোহ ; প্রবল টান নেই ; যেন বিষয়টা এমন,
প্রেমিকার জোড়া স্তন অট্টহাসি দিয়েও আমাকে ফিরাতে পারবে না আর কোন দিন ;  আর কোন দিন কাকের পালকের মতো উড়ে আসবে না সময়, উৎসবের আমেজ হৃদয়ে।
জীবনের করুণ দুঃখবোধ আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে হয়তো  রাজহাঁসের মতো।
হোটেল ছাল সাদিয়া পেট পুড়ে ভাত খাওয়া শিল্প করা আমি; জীবন টা আজও খুঁজে দেখে ক্লান্ত হ'য়ে উঠে কেন জানি।
সামনের সিটেরএক যাত্রী  জানালা খুলে দিতেই
আমার মাছের মতো চোখবুঁজে থাকা  গালে, রাজ্যের ধুলোবালি উড়ে আসে;
আসে বমি থেকে ছিটকে বেড়িয়ে আসা জলকণা।
হেলপার বিরক্তি ভেঙে বলে,
- এতো খোঁজাখুঁজির নাটকের কি দরকার?  না দিতে চাইলে না কন। বহুত দেখছি আপনার মতো মানুষ।
কি আশ্চর্য জাদুকরী শব্দে আমাকে সে আঁকলো। অবাক হই আমি;
কই আমি তো আমাকেই কখনো  এভাবে আঁকতে  পারলাম না।
এ পকেট ও পকেট হাতড়ে স্বস্তি খুঁজে বিদায় করি তাঁকে। আমার চোখ আবারও বুঝে আসে, ঘুমের ভিতর শুনি
পিছনের সিট থেকে ফিসফিস ভেসে আসছে নিবেদন  ;
বুঝি হৃদয়ে  জমা ঘামে জবজবে এক কিশোর অসংখ্য চোখ তোয়াক্কা না করে, উৎসবমুখর শালিকের মতো ওড়াউড়ি করে করে প্রেমিকার কামিজের ভিতরে।
শুভ যাত্রা  ছুটে চলে
আমিও ঘুমাই মরার মতো
সত্যিকারের মরবো বলে।

 

৫. পৃথিবী সুন্দর

এতোকিছুর পরেও মনে হয়
পৃথিবী সুন্দর
লাল কাঁকড়ার চোখ; গোধূলিতে হঠাৎ লুকিয়ে যাওয়া সৈকত ।
বুঝি, যে চলে যাওবার
শেষ মুহূর্তে হলেও চলেই যাবে
হয়তো না পাওয়ার বেদনা জমে-জমে কাঞ্চনজঙ্ঘা হবে
তবুও ভুলে গেলে চলবে না
-বাস্তবতা ভিন্ন কিছু।
এতোকিছুর পরেও
মনের খেয়ালে উঠানে দাঁড়িয়ে
তােমাকে দেখবাে বলে চাঁদ দেখি,
দেখি সূর্যের নিঃশ্বাস ফুরিয়ে ফেলা বাদুর ; আজও তরঙ্গে পথ আঁকে ।

 

কবি: দীপঙ্কর শুভ
মুন্সিগঞ্জ, টংগীবাড়ী