নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচটি সুন্দর হলো না। ব্যাটিং দুর্দশায় ২৭ রানের ব্যবধানে হেরে মাঠ ছাড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ৫ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-২ ব্যবধানে জেতে। যদিও সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই।
ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কিউইদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে মন্থর উইকেটে খেলার কৌশল থেকে বেরিয়ে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। ওই পরিকল্পনায় ব্যর্থ হলো টাইগাররা। আগে ব্যাট করে টাইগারদের ১৬২ রানের লক্ষ্য দেয় কিউইরা। বাংলাদেশ ম্যাচ হারে ২৭ রানে।
এদিন সৌম্য সরকার একাদশে ফিরলেও আগের চার ম্যাচেই ব্যর্থ দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখের ওপরই আস্থা রাখে টিম ম্যানেজম্যান্ট। লক্ষ্য টপকাতে নেমে তাল মেলাতে পারেনি বাংলাদেশের এই উদ্বোধনী জুটি। ধীরগতির শুরু করেও নিজেদের উইকেট বাঁচাতে পারেননি তারা। পঞ্চম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলের বলে পয়েন্টে স্কট কুগেলেইনের হাতে ধরা পড়ে লিটন ফেরেন ১২ বলে ১০ রান করে।
নিউজিল্যান্ড যেখানে পাওয়ার প্লেতে তুলেছিল ৫৮ রান, সেখানে লিটনকে হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৫ রান। সিরিজে প্রথম সুযোগ পেয়ে তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার ব্যর্থ হন আরেক দফা। নিউজিল্যান্ড সিরিজের ব্যর্থতা টেনে এনে কোল ম্যাককঞ্চির বলে পয়েন্টে রাচিন রবীন্দ্রকে ক্যাচ দেন ৯ বলে ৪ রান করে। পরের ওভারেই সাজঘরে ফেরেন নাঈম। আরও একবার ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আজ থামেন ২১ বলে ২৩ রান করে।
ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেন মুশফিকুর রহিমও। লক্ষ্য যেখানে ১৬২ রানের, সেখানে ধরে খেলতে গিয়ে বিপদ বাড়ান তিনি। ইনিংসের নবম ওভারে রাচিনকে উইকেট দিয়ে ফেরেন ৮ বলে ৪ রান করে। এতে দলীয় পঞ্চাশ রানের কোটা পূর্ণ করার আগে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। বিপর্যয়ের মুখেও ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন আফিফ হোসেন, তাকে সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
পঞ্চম উইকেটে দুজনের জুটি থেকে আসে ৬৩ রান। মাহমুদউল্লাহ ২১ বলে ২৩ রান করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। নুরুল হাসান সোহানও সুবিধা করতে পারেননি, ৪ রান করে এজাজ প্যাটেলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সুযোগ পেয়ে সেটি কাজে লাগাতে পারেননি শামীমও। ২ রান করে বোল্ড হন তিনি। তবে একপ্রান্ত ধরে রাখেন আফিফ হোসেন। শেষ পর্যন্ত ৩৩ বলে ৪৯ রানে অপরাজিতে থাকেন তিনি।
নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ১৩৪ রান তুলতে পারে স্বাগতিকরা। এতে ২৭ রানে ম্যাচ হারতে হয় বাংলাদশকে। শেষটি জয়ে রাঙিয়ে ২-৩ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করে নিউজিল্যান্ড।
এর আগে নিজেদের ইনিংস শুরু করতে নামেন নিউজিল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান ফিন অ্যালেন ও রাচিন রবীন্দ্র। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফিরতে পারতেন রাচিন। নাসুমের বলে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ছাড়েন শামীম পাটোয়ারী। শরিফুল ইসলামের ফেরাটা ছন্দময় ছিল না। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বল করতে এসে ১৯ রান দেন তিনি। তাকে মিড উইকেট দিয়ে হাঁকানো ফিন অ্যালেনের ছক্কাটি ছিল দেখার মতো।
ঘুরে দাঁড়াতে অবশ্য সময় নেননি শরিফুল। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার হাত ঘোরাতে এসে রাচিনকে আউট করেন। ১২ বলে ১৭ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন এই ওপেনার। পরের বলেই খুনে মেজাজে ব্যাট করতে থাকা ফিন অ্যালেনকে ফেরাতে পারতেন শরিফুল, তবে আম্পায়ার আঙুল তুললেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান অ্যালেন। কিন্তু পার পাননি তিনি, পরের বলেই বোল্ড। ২৪ বলে ৪ চার ৩ ছক্কায় ৪১ রান আসে অ্যালেনের ব্যাট থেকে।
পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৫৮ রান কিউইদের। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরার পর রানের গতি ধরে রাখতে পারেননি উইল ইয়াং, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমরা। শেষদিকে অবশ্য বড় সংগ্রহ আসে অধিনায়ক টম লাথামের ফিফটিতে। এর আগে ইনিংসের নবম ওভারে প্রথমবারের মতো হাত ঘোরাতে এসে সফল হন আফিফ, ৬ রানে ফেরান ইয়াংকে। দেড় বছর আর ১৫ ম্যাচ পর বল হাতে নেন তিনি।
এরপর গ্র্যান্ডহোমকে ফেরান নাসুম। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান আউট হন ৯ রান করে। তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচ নিয়ে ২০ রানে থাকা নিকোলসকে সাজঘরের পথ দেখান নুরুল হাসান। শেষদিকে কোল ম্যাককঞ্চিকে নিয়ে জুটি গড়েন লাথাম। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মাত্র ২০ বলে দুজন যোগ করেন ৪৩ রান। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬১ রান।
শেষ ওভারে নিজের ফিফটি তুলে নেন লাথাম। মাত্র ৩৭ বলে আসে তার এই অর্ধশতক। যেখানে সমান দুটি করে চার-ছক্কায় ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন লাথাম। ম্যাককঞ্চির ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান। বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল ইসলাম ৪৮ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন। তাসকিন, আফিফ, নাসুমরা নেন ১টি করে উইকেট।
খেলা/বাংলাদেশ দর্পণ