ঢাকা:আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাঁকে সমন দিতে হবে। মামলা হওয়ার পর সাংবাদিক আদালতে জামিন চাওয়ার সুযোগ পাবেন।
ওভারসিজ করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত মিট দ্য ওকাব অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন । আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ওকাব।
আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হলে, তা তাৎক্ষণিকভাবে আইসিটি অ্যাক্ট ২০০৬–এর একটি সেলের কাছে চলে যাবে। সেই সেল তদন্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার মতো উপাদান পেলে মামলাটি নেওয়া হবে। অফিস আদেশ না দেওয়া হলেও এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা থানাগুলোকে দেওয়া হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছুটা অপব্যবহার ও কিছুটা দুর্ব্যবহার হয়েছে বলে স্বীকার করেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর কারণে একটা ধারণা জন্মেছে যে এই আইন বাক্ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোধ করতে করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই আইন এর কোনোটাকেই বন্ধ বা বাদ দেওয়ার জন্য করা হয়নি।
দণ্ডবিধিতে যেসব অপরাধ আছে, সেসব অপরাধ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জারি হয়েছে উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, যে অপরাধগুলো আগে ডিজিটালি করা হতো, এখন দেখা গেছে, অনেকগুলো ডিজিটালি করা হয় না। ডিজিটালি অপরাধ না করা, সেটা থেকে ফিরে আসার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দরকার।
ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুজনে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন যদি কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তাৎক্ষণিক সেই মামলা আদালতে গ্রহণ করে আদালত এর প্রসিডিউর শুরু করবেন না। আরেকটা আইন আছে আইসিটি অ্যাক্ট ২০০৬, সেখানে একটি সেল আছে, যারা তদন্ত করতে পারে যে মামলাটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয় কি না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে মামলা হবে, তাৎক্ষণিকভাবে সেটা সেই সেলে যাবে। সেই সেলের তদন্তের পর যদি সাব্যস্ত হয় এই যে হ্যাঁ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে অপরাধে নালিশ করা হয়েছে, তাতে সেই অপরাধের ইনগ্রেডিয়েন্টস (উপাদান) এই নালিশের মধ্যে আছে, তাইলেই মামলাটা নেওয়া হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর আরেকটি বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ রকম মামলা করলে একজন সাংবাদিককে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করার যে ধারণা, তা এই ধারণাকে (বাক্ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোধ) জ্বালানি দিচ্ছে। সে জন্যই তাৎক্ষণিক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত সম্পন্ন না হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ থাকলেও একজন সাংবাদিককে কারাগারে নেওয়া যাবে না। আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন, গত ছয় মাসে এ রকম ঘটনা খুব একটা ঘটেনি।’
অফিস আদেশ জারি করার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ নির্দেশনা আমরা নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে দিতে পারি না। যেটা করা হচ্ছে, তা হলো পুলিশ যেখানে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা রাখে, সেখানে ইন্টারনালি প্রতিটি থানাতে এ রকম জানানো হয়েছে বলে আমার কাছে খবর আছে।’
এক সাংবাদিক এ সময় প্রশ্ন করেন, এ জন্যই কি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছিল? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে অপরাধ না করেন, তাঁর বিরুদ্ধে কি এই আইনে মামলা হবে? রোজিনা নিশ্চয় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপরাধ করেননি। সে জন্যই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তাঁর ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়নি।’
সেই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু আমরা তো প্রথমে শুনেছিলাম, রোজিনা ইসলাম ছবি তুলছিলেন। সেটা ডিজিটাল ফরম্যাটে এসেছে। এ কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরে শোনা যায়, আইন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রেসস্ক্রিপশনের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে না করে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে ল মিনিস্ট্রির প্রেসক্রিপশন বা আমার আলোচনার একটা ইমপ্যাক্ট হয়েছে।’
প্রতিবেদক,বাংলাদেশ দর্পণ