ঢাকাঃ এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া বৌ নিজ ঘরেই ফিরে এলেন ৩৭ বছর পর। ঘরে এসে সতীনকে পেলেন, কিন্তু অনাদর না পেয়ে বরং মমতা মাখা সমাদরই পেলেন। অভাবনীয় এ ঘটনাটি ঘটেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ, গত নভেম্বরের ২৮ তারিখ বাড়ি ফিরেছেন উমাপদের প্রথম স্ত্রী গুমা বাউরি। ৩৭ বছর তার কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। এক দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন। বকখালিতে এক চায়ের দোকানের মালিক তাকে রাস্তায় দেখে থাকার জায়গা দেন। বাড়ি কোথায় বলতে পারেননি গুমা। রাস্তাঘাট তেমন চিনতেন না। আর স্মৃতিশক্তিও কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। নিজের নাম পর্যন্ত গুলিয়ে ফেলতেন।

সেই থেকে ওই চায়ের দোকানেই এতদিন কাজ করে দিন কাটিয়েছেন। সেখানে তাকে অধিকাংশ মানুষ ‘ভবানী মণ্ডল’ বলেই চিনতেন। সম্প্রতি হ্যাম রেডিওর সদস্যরা গুমার কথা জানতে পারেন। ভারতের বিভিন্ন জেলার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবশেষে তার স্বজনদের খোঁজ পাওয়া যায়।

এখন তিনি আবার গুমা বাউরি। মাঝে কেটেছে ৩৭ বছর বা তারও বেশি। স্মৃতিশক্তি সঙ্গ দেয়নি অনেক দিন। নাম জিজ্ঞাসা করলে গুমা এখনও গুলিয়ে ফেলেন। মাঝেমাঝেই বলে ফেলছেন, তিনি ‘ভবানী’। হই হই করে ঠিক করে দিচ্ছেন অন্যরা। এ সব নিয়েই এখন হাসিঠাট্টা চলছে বাউরি পরিবারে।

এত বছর পর বাড়ি ফেরা সহজ কথা নয়। সচরাচর এমন ঘটনা দেখাও যায় না। ছায়াছবিকেও হার মানিয়েছে বাস্তব। ইতোমধ্যে বিয়ে করে ফেলেছেন গুমার স্বামী। তাদের ছেলেমেয়েরাও বড় হয়েছেন। সকলে কি গুমাকে তাদের জীবনে জায়গা দেবেন? বাড়ি ফিরে কেমন আছেন তিনি?

এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ড সীমানায় ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চাস অঞ্চলের চৌরা গ্রামে গুমার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, গ্রামে যেন অকাল উৎসব লেগেছে। দিনের কাজ কোনোমতে সেরে দলে দলে গ্রামবাসী জড়ো হচ্ছেন উমাপদ বাউরির বাড়ি। তারই প্রথম স্ত্রী গুমা এত বছর পর ঘরে ফিরেছেন। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন গুমা আর বেঁচে নেই। টানা ৭ বছর কেউ নিখোঁজ থাকলে সরকার থেকে মৃত্যুর সনদ দেয়। গুমার ক্ষেত্রেও তেমন ঘটেছিল।

গুমার বয়স এখন ষাট পেরিয়েছে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, তার চেহারাও একেবারে বদলে গিয়েছে। নতুন রূপে গুমাকে কেমন দেখাচ্ছে, সে কৌতূহল রয়েছে সকলের। গ্রামের মেয়েরা তাদের বাড়ি গেলেই আড্ডা জমে। শুরু হয় পুরনো দিনের কথা। তিন যুগ পার করে ফিরে আসা অচেনা চেহারার এই মহিলা যে তাদেরই গ্রামের শঙ্করী-দুলালির মা, মেনে নিতে বেশি সময় লাগে না।

তবে সতীন আসছে শুনে মন খারাপ হয়নি সতীন ফুলটুসির? তিনি সময় নেন না উত্তর দিতে। বলেন, কেন হবে বলুন তো? কী আছে বাড়িতে আর একটা মানুষ এলে? আমরা কি কেউ খারাপ আছি?

ফুলটুসি মনস্থির করে নিয়েছেন, সকলে মিলেমিশে থাকবেন। ছেলেমেয়েদের মতো গুমাকেও দেখেশুনে রাখবেন।

অনেকেই বলিউডে রাখী আর রেখার ‘বসেরা’ ছবি দেখেছেন অথবা শাহরুখ খান-ঋষি কাপুরের ‘দিওয়ানা’। মৃত ধরে নেওয়া স্ত্রী বা স্বামী বহু বছর পর ঘরে ফেরার টানাপড়েন কেমন, পর্দায় তা দেখা আছে। কিন্তু ছায়াছবি আর বাস্তবে ফারাক থাকে। সম্ভবত সেই কারণেই এত বছর পর গ্রামে ফিরেও সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো ঘরছাড়া হতে হয়নি কাহিনির মুখ্য চরিত্র গুমাকে। কাছে টেনে নিয়েছেন সকলে। এমনকি সতীনও!

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ