বরগুনায় ভাগ্নির বিয়েতে অংশ নিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় স্ত্রী দুই মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত আবুল কালাম আজাদ বলছেন তাদের সঙ্গে তিনিও প্রাণ হারালেই ভালো হত।

শনিবার বরগুনার আমতলী উপজেলা হাসপাতালের মেঝেতে গড়াগড়ি করে আর্তনাদ করতে করতে তিনি আহাজারি করছিলেন, “ আল্লাহ আমারে এখন নিয়া যাও। আমারে একলারে বাচাইয়া রেখে কি লাভ। ওদের সাথে মারা গেলেও ভালো হতো। এই যন্ত্রণা আর সহ্য করা লাগতো না।

ঢাকার ওয়ান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ক্রোকচর (চরপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা। চাকুরির সুবাদে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি ১০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করেন।

শনিবার ভাগ্নি হুমায়রা আক্তারের বিয়ে অনুষ্ঠানে এসে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া হাট সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে গেলে মাইক্রোবাসের কাচ ভেঙে আবুল কালাম আজাদ সাঁতরে তীরে উঠেছেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি স্ত্রী মেয়েদের।

আবুল কালাম আজাদে স্ত্রী শাহনাজ আক্তার মুন্নী বেগম (৪০) টেলিটক অফিসের প্রধান কার্যালয়ে অডিটর, বড় মেয়ে তাসফিয়া মোবাশ্বেরা আজাদ (১১) ভিকারুন নুন নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণি এবং ছোট মেয়ে তাহিয়াত মেহজাবিন আজাদ বারিধারার সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারি শাখার ছাত্রী।

তারা ছাড়াও এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ছয়জন। তাদের লাশ উদ্ধারের পর পাঠানো হয় আমতলী উপজেলা হাসপাতালে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায় আবুল কালাম আজাদ শোকে পাথর হয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে নিহত স্ত্রী আর দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে শুধু বিড়বিড় করছেন। মাঝে মাঝে আবার তিনি মেঝেতে গড়াগড়ি করে আর্তনাদ করছেন।

স্থানীয় দুলাল মাতুব্বর বলেন, “দুই পরিবারের মোট জন সদস্য মারা গেছে। তার মধ্যে সাতজনই আমাদের গ্রামের। এতে পুরো গ্রামে শোকে স্তব্ধ।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “আমি বিষয়টি জেনেছি। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।

মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চার জন যাত্রী নিয়ে আরেকটি ইজিবাইক ছিল। পথে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দুটি গাড়ি হলদিয়া হাট ব্রিজটি পার হতে গিয়ে ভেঙে নিচে পড়ে যায়। ইজিবাইকের যাত্রীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের ৯জন মারা গেছেন।

 মাদারীপু প্রতিনিধি বাংলাদেশ দর্পণ