বাংলাদেশে প্রথম ১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৮ই মার্চ। ৮ই মার্চ হতে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ২৯ দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮৮ জন। আজই সর্বোচ্চ আক্রান্ত সংখ্যা ১৮ জন। গতকালের সংখ্যাটা ছিল ৯ জন। এপর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে ৯ জন। আইইডিসিআর বলছে, অন্তত তিনটি ক্লাস্টারে এই কম্যুনিটি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো হচ্ছে মাদারীপুরের শিবচর, ঢাকার বাসাবো, টোলারবাগ এবং বৃহত্তর মিরপুর এলাকা। করোনার কাল মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে, তা ক্রমশঃ দৃষ্টিগোচর হতে শুরু করেছে।
যেসব দেশে করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে, ১ মাসে আগেও সেসব দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এতো বেশি ছিল না। ইউরোপ আমেরিকাসহ প্রায় সব দেশেই দুই মাস পর করোনা ভাইরাস মহামারী রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশে মহামারী রূপ নিলে কী হবে সেটা বোধ করি আমরা বুঝতে পারি। সরকারের যথেষ্ট প্রচেষ্টা সত্তেও আমাদের যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কুকুর বেড়ালের মত মরে পড়ে থাকতে হবে। চিকিৎসার সুযোগতো দূরের ব্যাপার, মৃত্যুর পরে দেহের শেষক্রিয়া করার মত ব্যবস্থাও পাওয়া যাবে না। তখন আর ঘরে থেকেও লাভ হবে না। তাই সময় থাকতে ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন।
করোনা আমাদের দেশে এমনটি মহামারী রূপে আঘাত করুক, সেটা আমরা কেউই চাই না। তবুও সচেতনতার বিকল্প নেই। শুধু নিজে সচেতন থাকলেই আপনি নিরাপদ নন, আপনার নিরাপদে থাকা নিশ্চিত করতে অন্যকেও সচেতন করতে হবে।
যারা মনে করছেন, আমাদের দেশে কোভিড-১৯ ইউরোপ-আমেরিকার মত ঐরকম মহামারী হয়ে আসবে না। যারা এখনো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন আর আনন্দে পাড়ার দোকানের চা খাচ্ছেন কিংবা পুরো ব্যাপারটাকে ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর সৃষ্টিকর্তার গজব বলে নিয়তির উপর ছেড়ে দিচ্ছেন -- তাঁদের জন্য একটা দুঃসংবাদ দিচ্ছি। নিচের পরিসংখ্যানটি একবার দেখে নিলে ব্যাপারটি পুরো স্পষ্ট হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র:
১ জানুয়ারি - ১ জন শনাক্ত
১ ফেব্রুয়ারি - ৭ জন শনাক্ত
১ মার্চ - ৭৪ জন শনাক্ত
১ এপ্রিল - ১,৯০,০০০ জন শনাক্ত
ইতালি:
৩১ জানুয়ারি - ২ জন শনাক্ত
২৯ ফেব্রুয়ারি - ১১০০ জন শনাক্ত
৩১ মার্চ - ১,০৫,৮০০ জন শনাক্ত
স্পেন:
১ ফেব্রুয়ারি - ১ জন
১ মার্চ - ৮৪ জন
৩১ মার্চ - ৯৬,০০০ জন
যুক্তরাজ্য:
৩১ জানুয়ারি - ২জন
১ মার্চ - ৩৬ জন
৩১ মার্চ - ২৫,৫০০ জন
জার্মানি:
২৭ জানুয়ারি - ১ জন
২৭ ফেব্রয়ারি - ৪৬ জন
২৭ মার্চ - ৫১,০০০ জন
৩১ মার্চ - ৭১,৮০০ জন
ফ্রান্স:
২৪ জানুয়ারি - ২ জন
২৪ ফেব্রুয়ারি - ১২ জন
২৪ মার্চ - ২২,৬০০ জন
৩১ মার্চ - ৫২,৮০০ জন
ভারত:
৩০ জানুয়ারি - ১ জন
২৯ ফেব্রুয়ারি - ৩ জন
৩১ মার্চ - ১,৪০০ জন
০৫ এপ্রিল - ৩,৫০০ জন প্রায়
পাকিস্তান:
২৬ ফেব্রুয়ারি - ২ জন
২৬ মার্চ - ১২০০ জন
৩১ মার্চ - ১৯০০ জন
বাংলাদেশ:
৮ মার্চ - ১ জন
৩১ মার্চ - ৪৯ জন
৫ এপ্রিল - ৮৮ জন
বাংলাদেশে আক্রান্তের হার একই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বাড়ির কাছে চলে এসেছে মৃত্যু। মৃত্যু বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ার আগেই সচেতন হতে হবে। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, "মনে করুন, ঘরের বাইরে কিছু নেই। ঘরের বাইরে আপনার জন্য ওৎ পেতে আছে এমন এক মেহমান-- যার ডাক নাম করোনা, আসল নাম মৃত্যু।"
আসুন আমরা দেশের, পরিবারের, প্রিয়জনের এবং নিজের স্বার্থে ঘরে থাকি। নিজে সুস্থ থাকি অন্যকেও সুস্থ রাখি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের সব নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলি। এটাই একমাত্র পথ এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করার।
মিন্টু ভদ্র, বিশেষ প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ