‘ঘরে চাল নেই। বাইরে কাজ নেই, ঘরে বসে আছি। অভাবের তাড়নায় মাঠে পিঁয়াজ কুড়াতে গিছলাম, মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম, এক বাড়ি ইকটু পানি খাতি গেলাম, তাও করোনার ভয়ে ঢুকতি দিলো না। বাড়ি বাড়ি কাজ করি তাও বন্ধ। শুনিছি সরকার, আরো মেলা মানুষ চাল-ডাল দেচ্ছে, কই আমারে এই পল্লীতে তো কেউ আসে না।’

এভাবেই কয়েকদিনের খেয়ে না খেয়ে থাকা কষ্টের কথা বললেন ঝিনাইদহের শৈলকুপার কাঁচের কোল আদিবাসী পল্লীর লক্ষী রানী সরকার। আদিবাসী পল্লীতে ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সরকারি বা ব্যক্তিগত দানের এক মুষ্টি চাল-ডালও পৌঁছায়নি এ পল্লীর কোনো পরিবারের হাতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬০ থেকে ৭০টি বুনো বাগদি আদিবাসী পরিবারের বাস এ পল্লীতে, যাদের আয়-রোজগারের একমাত্র পথ কখনও কুঁচে ধরে বাজারে বিক্রি, কখনও বাজারে মুটের কাজ করা কিংবা বাজারঝাড়– ও মানুষের বাড়িতে কাজ করা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাজারঘাট বন্ধ থাকায় এখন না খেয়ে মরার উপক্রম সমাজের নিম্ন আয়ের এ মানুষগুলোর।

পল্লীর আরেক বাসিন্দা রাম গোপাল সরকারের স্ত্রী রীনা রানী সরকার জানান, স্বামী বাজারে মুটের কাজ করে, আর তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন। বর্তমানে করোনার ভয়ে কোনো বাড়িতেও কাজে নেয়  না। আয় রোজগারের সব রাস্তা বন্ধ। ঘরে চাল নেই। বুধবার রাতে এক বাড়িতে গিয়ে এক পোয়া ময়দা এনে ছেলে মেয়েদের কিছু বানিয়ে দিয়েছেন। আর সকালে বুনো কচু ঘুটে খেয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের তো কেউ কিছু দেয় না দাদা।'

এভাবে আদিবাসী পল্লীর পারুল রানী, বিশাখা, রানী, দিলিপ কুমার, সুজন, শ্রী দিনু কুমারসহ সবার মুখে ছিল কিছুই না পাওয়ার আক্ষেপ। 

এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় বিতরণ করবেন। আদিবাসী পল্লীর ব্যাপারটি খোঁজ নেওয়া হবে।