চট্টগ্রাম: পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির নাম মিলন সেনগুপ্ত। পরার মতো একটিমাত্র জামা আছে তাঁর। আজকে ধুয়ে দিয়েছেন তাই খালি গায়ে রয়েছেন তিনি। শুকানোর আগ পর্যন্ত এভাবেই থাকতে হবে তাঁকে।

মিলন সেনগুপ্ত সাধারণ কোনো পরিবারের মানুষ নন। চট্টগ্রামের কীর্তিমান পুরুষ, উপমহাদেশের বিখ্যাত বাঙালি আইনজীবী, রাজনীতিক ও সমাজকর্মী যাত্রামোহন সেনগুপ্ত এর একমাত্র বংশধর। টলমটল চোখে তাকিয়ে থাকা মিলন সেনগুপ্ত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন কিন্তু স্বীকৃতি পাননি। শেষ দিনগুলো তাঁর কেমন যাচ্ছে সহজে অনুমেয়।

চলমান করোনা সংকটে চন্দনাইশ থানার ওসি তাঁর বাড়িতে গিয়ে এই অবস্থার কথা জানান। তাঁর পূর্বপুরুষ যাত্রামোহন সেন (জেএম সেন) যিনি প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রাম শহরে টাউন হল (জেএম সেন হল) ডাঃ খাস্তগীর মাধ্যমিক বালিকা স্কুলসহ অনেক শিক্ষা—সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, মন্দির এমনকি নূর মহম্মদ তরফ নামে মসজিদের ভূমিও দান করেছিলেন। জেএম সেনের পুত্র দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ছিলেন আরেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। যিনি প্রথম সারির কংগ্রেস নেতা ও ব্যারিস্টার। যিনি উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাথে লড়াই করেছেন। জেল খেটে খেটে মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী ভিনদেশী নেলি গ্রে (নেলি সেনগুপ্ত) ছিলেন আরেক বিখ্যাত মানুষ। রাজনীতিক ও সমাজকর্মী। তিনিও হেঁটেছিলেন স্বামীর পথেই। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী হয়েছিলেন।

অসাম্প্রদায়িক মানবিক বরমার সেন পরিবারের মানুষ উপমহাদেশের রাজনৈকিত—সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং শিক্ষাবিস্তারে যে অবদান রেখে গেছেন তা ঐতিহাসিক। ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর আর খামখেয়ালি। শোনা যায়, তাদের অবশিষ্ট সব সম্পদ বেদখল হয়ে গেছে। এই লজ্জা রাষ্ট্র সমাজ সভ্যতার।