বলা হয় ভারত বিরোধীরা ভারতের গেরুয়া সমাজে তথা সাধু সন্ন্যাসীদের খুব ভয় পায়। ভয় এই যে, যেকোনো সময় কোনো সাধু সন্ন্যাসীর শিক্ষা থেকে আরেক ছত্রপতি মহারাজের জন্ম হয়ে যেতে পারে। ভারতবর্ষ কৃষি প্রদান দেশ- এই কথাটি বেশ প্রচলিত। তবে যে কথাটি প্রচলিত নয় সেটা হল ভারত ঋষি প্রধান দেশ।
বলার তাৎপর্য এই যে, ভারতে যখন যখন সংকট এসেছে তখন তখন ঋষি,মুনি, সন্ন্যাসী, যোগী, সাধুরা পথ দেখিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ভারতকে মুঘলদের হাত থেকে মুক্ত করতে বড়ো ভূমিকা ছিল ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের। আর শিবাজী মহারাজ এই কাজ করতে পেরেছিলেন তার গুরুদেব রামদাস স্বামীর শিক্ষার জন্য।নাগা সাধুদের
অন্যদিকে ইংরেজদের হাত থেকে ভারতকে মুক্ত করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আর নেতাজি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের থেকে। অর্থাৎ সবক্ষেত্রেই ভারতে ঋষি, সন্ন্যাসী, সাধু, যোগীদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
তবে আজকের দিন দাঁড়িয়ে ভারত বিরোধীরা সাধুদের অসভ্য, চোর ইত্যাদি প্রমান করার দারুন প্রয়াস করে। বলিউড তাদের সিনেমার মাধ্যমে সাধুদের হাসি মজার পাত্রে পরিণত করার চেষ্টা করে। এমনকি ষড়যন্ত্র করে ভারতীয়দের ইতিহাস বই থেকে সাধুদের অবদান, সাধুদের বীরত্ব বাদ দেওয়া হয়েছে। ভারতের ইতিহাস কিভাবে বিকৃত করা হয়েছে তা আমরা বহুবার তুলে ধরেছি। উদাহরণস্বরূপ ভারতের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গোকুল যুদ্ধকে ইতিহাস পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
জানিয়ে দি, গোকুল যুদ্ধঃ বিদেশী আক্রমনকারী আফগান সেনা ও নাগা সাধুদের মধ্যে হয়েছিল। যারা বলিউড সিনেমা দেখে অভ্যস্ত তাদের অনেকেই ধারণা নাগা সাধুদের সমাজ পাগল যারা ছাই মেখে ঘুরে বেড়ায়। এমনকি কিছু ভারত বিরোধী সংবাদ মাধ্যমও নাগা সাধুদের খারাপ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখায়। তবে আসলে নাগা সাধু হওয়ার জন্য কঠোর শারীরিক ও মানসিক তপস্যার প্রয়োজন হয়।
১৭৫৭ সালে যখন উন্মাদী আফগান সেনা ভারতীয় ধন সম্পত্তি লুটতে লুটতে ও মহিলাদের অপহরণ করতে করতে গোকুলে পৌঁছেছিল তখন নাগা সাধুরা যুদ্ধঃ ঘোষণা করেছিল। আফগান সেনারা গোকুলের সমস্ত মন্দির লুটপাট করার পরিকল্পনা বানিয়েছিল। যারপর ৫ হাজার নাগা সাধুর সেনা আফগান সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে। আহমেদ শাহ আবদালির সেনাপতি প্রথমে নাগা সাধুদের মজার ছলে নিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধঃ শুরু হতেই নাগা সাধুদের রুদ্র রূপ দেখে আফগান সেনা পলায়ন শুরু করে। ইতিহাসবিদদের মতে এক একজন নাগা সাধু ১০ জন আফগান সেনাকে শেষ করেছিল। কিছু কিছু সাধু ১০০ জনকে পর্যন্ত এক শেষ করে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিল।
হর হর মহাদেবের শ্লোগানে আফগান সেনা ভয়ে কেঁপে উঠেছিল। ব্রহ্মচর্য এর বলের দরুন মাত্র ৫ হাজার নাগা সাধু আফগানদের বিশাল সেনাকে মুহূর্তের মধ্যে শবদেহ পরিণত করেছিল। জটাধারী নাগা সাধুদের যে উন্মাদীর দল মজার পাত্র মনে করেছিল সেই সাধুদের তান্ডব আফগান সেনার মধ্যে হাহাকার ছড়িয়ে দেয়। যারপর আফগান সেনা তাদের আরো সেনাকে যুদ্ধে আসার জন্য বলে। তা সত্ত্বেও জয় মা।ভবানী ও হর হর মহাদেব শ্লোগান দিয়ে নাগা সাধুরা যে তান্ডব করে তাতে যুদ্ধক্ষেত্র রক্তে লাল হয়ে উঠে। আফগান সেনার হার নিশ্চিত দেখে তাদের সেনাপতি বেঁচে থাকা বাকি সেনাকে নিয়ে পলায়ন করে। যুদ্ধে অনেক সংখ্যায় নাগা সাধুরাও বলিদান হয়েছিলেন তবে শেষমেষ আতঙ্কবাদীদের হারিয়ে গোকুলে ধর্মের জয় হয়।