কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মজিতপুর গ্রামে অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রখ্যাত বৈষ্ণব সাধকপুরুষ বৈষ্ণব চূড়ামনি শ্রী শ্রী বংশীদাস বাবাজী মহারাজের আশ্রম ও সমাধি মন্দির। 

 

লোকসমাজে তিনি 'বংশীদাস বাবাজি' নামেই সুপরিচিত। তাঁর প্রকৃত নাম ভৈরব চন্দ্র বর্মন। তাঁর পিতার নাম সনাতন বর্মন ও মাতার নাম সর্বসুন্দরী দেবী। ভৈরব চন্দ্র বর্মন ছোট বেলা থেকেই উদাসীন ও ভাবুক প্রকৃতির ছিলেন। তিনি বয়ঃকালে নবদ্বীপের বড়ালঘাট আখড়ায় বৈষ্ণবমতে দীক্ষা নেন এবং তপস্যায় বসেন। তিনি নবদ্বীপ, গয়া, কাশী, মথুরা বৃন্দাবন প্রভৃতি তীর্থস্থান ভ্রমণ করেন এবং  স্রষ্টার নাম ও মহিমা প্রচার করেন। তিনি জাতি-শ্রেণী-সম্প্রদায়ের সকল ভেদাভেদ ভুলে শ্রীচৈতন্যদেবের সাম্যবাদের প্রচার করেন। নবদ্বীপধামে তাঁকে বৈষ্ণব চূড়ামনি বংশীদাস বাবাজী উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

 

তীর্থভ্রমণ শেষে তিনি বাংলা ১৩৪৪  সালে এদেশে নিজ জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। বার্ধক্যে তাঁর অন্তলীলা নিকটবর্তী হলে তাঁকে বর্তমান মজিতপুর গ্রামের আখড়ায় একটি তাঁবুতে রাখা হয়। বাংলা ১৩৫০ সালের ৭ শ্রাবণ রবিবার দিবাগত রাত্র ৮ ঘটিকায় তাঁর মহাপ্রয়ান ঘটে। ভারতের নবদ্বীপের ভক্তগণ তাঁর দেহ নবদ্বীপে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এ দেশীয় ভক্তবৃন্দ তাঁকে বর্তমান আখড়াস্থলে সমাহিত করেন। 

 

মূল মন্দিরে একটি রাধা-গোবিন্দ মন্দির ও বংশীদাস বাবার সমাধি মন্দির রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বিশাল নাট মন্দির। সকলের সহযোগিতায় দূরদূরান্ত হতে আগত ভক্তদের থাকার সুবিধার্থে একটি আবাসকেন্দ্রও গড়ে উঠছে। এছাড়া মন্দিরে প্রাঙ্গনে একটি কাঠের রথও রয়েছে। প্রতি বছর রথযাত্রায় এখানে অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

 

পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা আশ্রমটির চারপাশের প্রকৃতি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। আশ্রমের চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আর নদীর স্রোতধারা মিলিত সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ উক্ত আশ্রমটি।

 

প্রতি বৎসর শ্রাবণ মাসে বংশীদাস বাবার মহাপ্রয়ান দিবসে উপমহাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ভক্তকুল ও বহু পূণ্যার্থী মজিতপুর আশ্রমে সমবেত হয় এবং তাঁর স্মরণে হরিনাম সংকীর্তন মহোৎসবে অংশগ্রহণ করেন।শ্রী শ্রী বংশীদাস বাবাজীর স্মরণে মহোৎসব চলাকালে তাঁর আশ্রম এলাকায় দেশজ পণ্যের মেলা বসে থাকে। 

 

ব্রহ্মপুত্রের তীর ঘেঁষা উক্ত আশ্রমটি দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম একটি ধর্মীয় নিদর্শন। সকলের আরো সহযোগিতা ও সরকারের সুদৃষ্টি পেলে এই আশ্রমটি কিশোরগঞ্জ জেলার অন্যতম দর্শনীয় একটি ধর্মীয় পীঠস্থান হতে উঠতে পারে।

অর্জুন কর্মকার | কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি