চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের স্বনামধন্য শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিকে বেসরকারিভাবে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তে স্বাস্থ্য অধিদফতর আরটি-পিসিআর নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি নেই।

প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো পর্যন্ত নেই বায়োসেফটি লেভেল-২ মানের ল্যাবরেটরি, সেই সাথে নেই পিসিআর মেশিনও। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষও নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না, কখন থেকে নমুনা পরীক্ষা শুরু করতে পারবে।

প্রথম করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে। এরপরই চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) এবং যথাক্রমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাবেও নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। তবে এই তিনটি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে এমন  অভিযোগও রয়েছে। ফলশ্রুতিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নমুনা পরীক্ষায় এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু অবশেষে চট্টগ্রামের এমন একটি ল্যাবকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যার কোনো প্রস্তুতিই নেই। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে এই ল্যাবটি কিভাবে অনুমোদন পেল।

এদিকে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি জেনারেল ম্যানেজার পুলক পাড়িয়াল বলেন, ১৫ জুনের দিকে কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

এছাড়াও জানা যায়, শেভরন  নমুনা পরীক্ষার অনুমতি পেলেও এখনো পর্যন্ত তারা পিসিআর মেশিন আনেনি। বস্তুত পিসিআর মেশিন বসানোর জন্য যে বায়োসেফটি-২ লেভেলের  ল্যাব দরকার হয়, সেই ল্যাবও স্থাপিত করতে সমর্থ হন নি।

মূলত করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার আগে ল্যাবের মান যাচাই করা হয়। তবে পুলক পাড়িয়াল জানান, কেউ তাদের ল্যাব পরিদর্শন বা মান যাচাইয়ের জন্য আসেননি। তিনি আরো বলেন, আমাদের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার ও মেয়র সাহেবের একসঙ্গে মিটিং হয়েছে এবং সেখানে আমরা মেশিনের জন্য টাকা অ্যাডভান্স করেছি এমনটা জানিয়েছি। মেশিন এসে পৌঁছাতে যে কয়দিন সময় লাগে অপেক্ষা করতে হবে। রেডি হবার পর একটা তারিখ দেবো এবং তা  আপনাদের সবাইকে জানাব।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. শেখ ফজলে রাব্বি এ বিষয়ে বলেন, এখন দুর্যোগের সময়। প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কাছে আবেদন করেছে এবং বলেছে যে ল্যাবের কাজ চলছে, তাই আমরা অনুমোদন দিয়েছি। তানাহলে কাজ  কিভাবে হবে? ল্যাবের যদি কোনো টেকনিক্যাল বিষয় থাকে, তবে আমাদের এখানে বিআইটিআইডি আছে। সে বিষয়ে খতিয়ে তারাই দেখবে। শেভরন আমাদের জানিয়েছে,  ১৬ তারিখের মধ্যে হালিশহরে তারা নমুনা পরীক্ষা শুরু করবে।

ল্যাবরেটরির মান যাচাই না করে অনুমোদন কেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। আমরা তো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালকেও অনুমোদন দিয়েছি।

ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশনের সভাপতির দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ বিষয়ে বলেন, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা ল্যাব স্থাপনের জন্য যারা অনুমতি চাইছে, তাদের অনুমোদন দিচ্ছি। তবে অবশ্যই ল্যাবের মান নিশ্চিত করার বিষয়ে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশে  সংক্রমণ বাড়াতে  করোনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য  সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনুমতি দিচ্ছে। দেশে প্রথম বেসরকারি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে গাজী গ্রুপ নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চনে। পরে তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। এনিয়ে ১৪টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গত ১৯ মে থেকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যেই শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি একটি, যাদের ল্যাবরেটরিই এখনো করা হয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাদেশদর্পণ.কম