যশোরের মণিরামপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ ঘোষাল (৭০) নামে এক পান ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৫ জুলাই) বেলা এগারোটার দিকে উপজেলার খানপুর ইউপির ঘুঘুদাহ গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। এক্ষেত্রে সুরক্ষিত থেকে সৎকার করার ব্যবস্থা করেছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁদের এমন মানবিক দৃষ্টান্তমূলক কর্মের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
এমন উদাহরণ দেখলে বুকটা ভরে যায়। এমন হাজার উদাহরণ আমার আপনার আশেপাশে রয়েছে। আমরা হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে এভাবেই বসবাস করে আসছি যুগের পর যুগ। এই আমার সম্প্রীতির বাংলাদেশ, এটাই আমাদের সোনার বাংলা। মানুষইতো মানুষের বিপদে পাশে দাড়াবে, সান্ত্বনা দিবে; হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, ভয় নেই আমরা পাশে আছি।
করোনা মহামারীর সংকটকালে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এভাবে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মানুষ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে করোনা সুরক্ষাসামগ্রী না থাকায় মৃতদেহ সৎকার করার ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। যাদের সুরক্ষাসামগ্রী আছে তারাই কেবল সৎকার কর্মে অংশ নিবে। সৎকারে সাহায্যকারী এমন সাহসী ও পরোপকারী মানুষদের মঙ্গল কামনা করি।
যিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। সাথে সাথে তার পরিবারের প্রতিও সমবেদনা প্রকাশ করছি।
দৈনিক খুলনাঞ্চল নামের একটি পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘করোনায় মৃত্যু হয়েছে ভেবে ভয়ে লাশের পাশে ভেড়েননি স্বজনদের কেউ। ফলে বিকাল পর্যন্ত বারান্দায় লাশ পড়ে ছিল। অবশেষে খবর পেয়ে দেবেন্দ্রনাথ ঘোষালের সৎকারে এগিয়ে আসেন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের একদল যুবক। তারা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে মৃতদেহ সাতগাতী শ্মশানের চিতা পর্যন্ত পৌঁছে দেন। পরে তার সৎকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।’
গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক কাঞ্চন ঘোষালের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘একসপ্তাহের বেশি সময় ধরে জ্বরে ভুগছিলেন আমার কাকা। আজ (২৫ জুলাই) সকালে অবস্থা অবনতির দিকে যায়। অবশেষে বেলা ১১ টার দিকে মারা যান তিনি। করোনার আতঙ্কে লাশের পাশে কেউ যায়নি। পরে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের মণিরামপুর টিমের সহায়তা চাওয়া হলে তারা সহযোগিতার হাত বাড়ান।’
তাকওয়া ফাউন্ডেশনের মণিরামপুর টিমের সমন্বয়ক নাসিম খানের ভাষ্য ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘সকালে মারা গেলেও আমরা খবর পাই বিকেলে। যেয়ে দেখি লাশ বারান্দায় পড়ে আছে। আশপাশে কেউ নেই। তখন আমরা টিমের সদ্যসগণ মিলে ভ্যানযোগে লাশ সাতগাতী শ্মশানে নিয়ে যাই। সেখানে সনাতন ধর্মীয় রীতি মেনে মরদেহের গোসল দেওয়া হয়। ততক্ষণে চিতা সাজানোর কাজ শেষ হয়। পরে আমরা লাশ চিতার উপর তুলে দিয়ে সৎকারে সহায়তা করি।’
মৃতের পরিবারের মানুষদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে নিউজে। আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের মানুষদের অবিবেচক মনে হয়েছে। মৃতদেহ না ছুঁয়ে অন্তত সৎকারে সাহায্য করা উচিত ছিল পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসীদের। এমন অবিবেচকের মত কাজ করার জন্য একরাশ নিন্দা জানাচ্ছি ।
আরেকটু সচেতনভাবে নিউজটি করা উচিত ছিল কিনা জানি না। কোনো মানুষ সকাল ১১টায় মারা গেলে বিকাল পর্যন্ত মৃতদেহ রাখা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। মৃত ব্যক্তিকে শেষবারের মত দেখার জন্য অনেকে আসতে চায়। অনেক আত্মীয়-স্বজন দূর থেকে আসতে গেলেও তো সময় লাগে! (যদিও রিপোর্ট অনুযায়ী সম্ভবত মৃত ব্যক্তিকে তেমন কেউ দেখতে আসেনি।)
আমরা প্রচার মাধ্যমে দেখেছি, করোনায় কারো মৃত্যু হলে সুরক্ষাসামগ্রী ব্যতীত মৃতদেহের পাশে যাওয়া উচিত নয়। এবং যাদের নিকট সুরক্ষাসামগ্রী থাকবে তাদেরই কেবল সৎকারে অংশগ্রহণ করা উচিত। সাধারণদের করোনা রোগীকে স্পর্শ করা উচিত নয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, মৃতদেহ থেকে করোনা ছড়ায় না। তারপরও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে সকলেরই উচিত করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ থেকে দূরে থাকা। কিন্তু এত দূরে নয় - যা দেখে আতঙ্কিত হতে হয়, নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজতে হয়। মূলত মৃতদেহ থেকে নয়, আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো জীবন্ত মানুষ থেকেই করোনা ছড়ায়।
লেখক: মিন্টু ভদ্র, সংগঠক ও সমাজকর্মী