বাংলাদেশের একটি খবর, একটি ভিডিও এখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেছে চারদিকে। '' এক মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে কিছু পুরুষ''। কেন খবরটি ভাইরাল হলো? ওই 'বিবস্ত্র' শব্দটির জন্য। স্বামীকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করেছে ওরা। কেউ কেউ বলছে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল, সম্ভব না হওয়ায় বিবস্ত্র করেছে। বিবস্ত্র করার ভিডিও করেছে ওরা, ফেসবুকে ভিডিও আপ্লোড করবে বলে। মেয়েটির শরীর শুধু ওরা নয়, আরও হাজার লোকে দেখবে, এর চেয়ে বড় শাস্তি একটি মেয়ের জন্য ওরা মনে করে না আর কিছু আছে।
যদি একটি পুরুষকে বিবস্ত্র করে অত্যাচার করা হতো, তাহলে কি খবরটা এমন ছড়াতো? মানুষ তখন পুরুষকে মারধর করার বিরুদ্ধে কিছু হয়তো বলতো, বিবস্ত্র করার বিরুদ্ধে নয়। পুরুষ বিবস্ত্র হলে ঘটনা ভয়ানক নয়, মেয়ে বিবস্ত্র হলে ঘটনা ভয়ানক। দুটোই শরীর। দুটো শরীরে শুধু যৌনাঙ্গগুলো ভিন্ন। তাহলে এক যৌনাঙ্গ প্রকাশ হলে ক্ষতি নেই, আরেক যৌনাঙ্গ প্রকাশ হলে ক্ষতি কেন?
যদি খবরটি এমন হতো -- ’একটি মেয়েকে নির্যাতন করেছে কিছু পুরুষ’, তাহলে কারও কিছু যেত আসতো না। বিবস্ত্র শব্দটি শুনে লোকে লাফিয়ে উঠেছে। কী, এত বড় স্পর্ধা, বিবস্ত্র করেছে! তার মানে মেয়েটির বুক মুখ পেট পিঠ হাত পা এমন কী যৌনাঙ্গ পর্যন্ত দেখে ফেলেছে! কী সর্বনাশ।
মেয়েরা তো শুধু স্বামীর সম্পত্তি নয়, মেয়েরা সমস্ত পুরুষের সম্পত্তি। সে কারণেই সব পুরুষই মেয়েদের শরীর নিয়ে চিন্তিত, এই শরীর আবার কেউ না দেখে ফেলে! সে কারণেই তো মেয়েরা কী পোশাক পরবে, তা পুরুষেরাই নির্ধারণ করে। বিবস্ত্র না করে নির্যাতন করলে সেটিকে অন্যায় বলে মনে করা হতো না। বিবস্ত্র না করে জবাই করে ফেললেও মানুষ এতটা ক্ষিপ্ত হতো না, যতটা বিবস্ত্র করায় ক্ষিপ্ত।
মেয়েকে বিবস্ত্র করাটা লোকের কাছে বড় নির্যাতন মনে হয়েছে, ওই চড় লাথি, লাঠির মারের চেয়ে। কারণ মানুষ বিশ্বাস করে, মেয়েরা আস্ত একখানা ‘শরীর’ ছাড়া কিছু নয়। যেহেতু মেয়েরা শুধুই ‘শরীর’, তাই শরীরের সবকিছু, বুক মুখ পেট পিঠ, ঢেকে রাখতে হবে। ঢেকে রাখতে হবে, কারণ ওগুলো মেয়েটির হলেও মেয়েটির নয়, ওগুলো মেয়েটির মালিক অর্থাৎ স্বামীর খাদ্য, ওই খাদ্যে মালিক ছাড়া কারো নজর পড়লে খাদ্য খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।
যে মানসিকতা মেয়েদের বোরখায় ঢেকে রাখে, মেয়েদের বিবস্ত্র করাকে অন্যায় বলে বিচার করে, কারণ মেয়েরা তো শুধুই ‘শরীর’, তার শরীর উলঙ্গ হয়ে গেলে তার আর কিছুই থাকে না ---- এই একই মানসিকতা কিন্তু বলে মেয়েদের বিবস্ত্র করা যাবে, ধর্ষণ করা যাবে, কারণ মেয়েরা তো শুধুই 'শরীর'।