বর্ণিল পৌষ সংক্রান্তি উৎসবের সাক্ষী হলো ঢাকাবাসী। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে হরেক রঙের আলোকছটা। উড়ছে ফানুস, সঙ্গে বাজছে লাউড স্পিকারে গান। গানের তালে তালে জ্বলছে ডিস্কো লাইট। দিনে ঘুড়ি উৎসব শেষে সন্ধ্যায় অন্যরকম মাত্রায় চলে সাকরাইন উদযাপন। পৌষকে বিদায় দেওয়ার এই মাহেন্দ্রক্ষণে শামিল হয় পুরান ঢাকার লাখখানেক মানুষ। পুরান ঢাকার এমন কোনও ছাদ বাকি থাকে না, যেখানে মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না। তারা এই উৎসবে শামিল হয়ে আনন্দের মাত্রা ও প্রাণ আরও বাড়িয়ে দেয়।

পৌষ মাসকে বিদায় দিতেই আয়োজন করা হয় পৌষ সংক্রান্তি। সংক্রান্তি থেকে উৎপত্তি হয়েছে সাকরাইনের। তাই এ সময় সাকরাইন উৎসব পালন করে পুরান ঢাকার লাখো মানুষ। উৎসবে সকালের ভাগে ছিল পিঠা-পুলিসহ নানাবিধ মিষ্টি খাবারের আয়োজন। দুপুর থেকে শুরু হয় ঘুড়ি উৎসব। আর সূর্য ডোবার আগ থেকে শুরু হয় আলোকসজ্জা, আতশবাজি আর গানবাজনা। সাকরাইন উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে উচ্ছ্বসিত থাকেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। তাই আয়োজনের কমতি না রাখতে প্রস্তুতি শুরু হয় অন্তত সুই সপ্তাহ আগে থেকেই।

পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাকরাইনের এই উদযাপন দুই ভাগে পালন করেন তারা। প্রথম দিন অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার, গেন্ডারিয়া, জুরাইন এলাকার মানুষ সাকরাইন উদযাপন করেন। আর পরের দিন ১৫ জানুয়ারি শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, লালবাগ, বংশাল, নাজিরাবাজার এলাকার মানুষ সাকরাইন উৎসব পালন করেন।

দিনের আলোতে রঙবেরঙের ঘুড়িতে মেতে ছিল পুরান ঢাকার আকাশ। আর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মেতেছে হরেক রঙের আলোতে। পুরান ঢাকার আকাশে রঙবেরঙের লেজার লাইট, বর্ণিল আতশবাজি আর গানের ছন্দে চলে পৌষকে বিদায় জানানোর এ উৎসব। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা আমীন বাসার ছাদে পরিবার নিয়ে আয়োজন করেছেন সাকরাইন উৎসব। সেখানে মুখরোচক খাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের আয়োজন করেছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বংশ পরম্পরায় তাদের এই আয়োজন চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে সাকরাইন উৎসবে কিছুটা আধুনিকতা যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।

এদিকে প্রথমবারের মতো সাকরাইন উৎসবে যোগ হয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ঘুড়ি উৎসব। দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিয়েছেন, ঢাকার ঐতিহ্য লালনে এখন থেকে প্রতিবছর এই ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হবে।

তিনি বলেন, ‘এই যে ডিসকো গান-বাজনা এগুলো আগে ছিল না। আকাশে এত লেজার লাইটও জ্বলতো না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাকরাইন পালনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে খাবার আর ঘুড়ি উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সাকরাইন। গানবাজনা হতো, তবে ব্যাপক আকারে না।’

গেন্ডারিয়া এলাকার বাসিন্দা কাজী শরীফ বলেন, ‘আগে শুধু পুরান ঢাকার মানুষ এই উৎসব পালন করতেন। এখন ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসেন সাকরাইন দেখতে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে সাকরাইন নিয়ে খুব আগ্রহ দেখেছি। বন্ধুবান্ধব দলবল নিয়ে চলে আসেন, আনন্দ করেন। পুরান ঢাকায় এরকম উৎসব সারা বছরে আর হয় না।’