বাঘারপাড়ার খানপুর গ্রামের পাঁচশত বছরের পুরাতন শিব মন্দিরে চতুর্দশীর পর প্রতিপদ মঙ্গলবার থেকে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শুরু হয়েছে শিব ঠাকুরের পুজা। চলবে বুধবার দ্বিতীয়াতে চৈত্র সংক্রান্তির চড়কপুজা ও বৃহস্পতিবার তৃতীয়ায় ভগবতী পুজার মধ্য দিয়ে ৩ দিন ব্যাপি এ পুজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।


শিবমন্দিরের এ পুজার অনুষ্ঠানে খানপুর ,হরিশপুর,আড়–য়াকান্দি, গোবরা ও বয়রার প্রায় ২ শতাধিক মহিলা ভক্ত জড় হয়ে এ শিব ঠাকুরের পুজা দিচ্ছেন বলে ঐ মন্দির কমিটির সেক্রেটারী অশোক কুমার রজক ও উপস্থিত ভক্তগন জানান। মন্দির কমিটির সভাপতি কার্তিক চন্দ্র ঘোষ জানান পুরা বৈশাখ মাস ব্যাপি প্রতি মঙ্গলবার এখানে মঙ্গলচন্ডির পুজা অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মঙ্গলবার মঙ্গলচন্ডির ব্রত শেষে জাকজমক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে মা মঙ্গলচন্ডির পুজা অনুষ্ঠিত হবে। এই মঙ্গলচন্ডির পুজা অনুষ্ঠানেও প্রতি মঙ্গলবার প্রায় ৩/৪শ মহিলা ভক্ত জড় হয়ে থাকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। 

প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে খাজুরার জমিদার বোস বাবুদের আমলে এই শিব মন্দিরে পূজা-অর্চনা, রক্ষণাবেক্ষণ, ভক্তসেবা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পরিচালনার জন্য ফরিদপুরের  কোটালিপাড়া (বর্তমান গোপালগঞ্জ) থেকে একজন পূজারীকে এনে মন্দিরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন জমিদার বোস বাবুরা। ঐসময় এই শিব মন্দিরের আওতায় প্রায় ৮ একর জমি ছিল। কালক্রমে ঐ পূজারীর মৃত্যুর পর তার ছেলে হেমন্ত ভট্টাচার্য পুরোহিত হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। এখানে সারা বছর বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি, চৈত্রসংক্রান্তিতে শিবপূজা ও জমজমাট গ্রামীণমেলা এবং গানের আসর বসতো। 

 

প্রায় ৭৫ বছর পূর্বে হেমন্ত ভট্টাচার্যের মৃত্যু হলে তার চার ছেলে বাবুলাল ভট্টাচার্য, হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বদ্রীনাথ ভট্টাচার্য ও আদ্যনাথ ভট্টাচার্য মন্দিরের দায়িত্ব নেন। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের পূর্বে ব্রিটিশ আমলে বড় ছেলে বাবুলাল ভট্টাচার্য নড়াইলের জমিদারের কাছারীর দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি ভারতে চলে যান। দেশ ভাগের পর পাকিস্তান আমলে পর্যায়ক্রমে সেজো ছেলে বদ্রীনাথ ভট্টাচার্য ও ছোট ছেলে আদ্যনাথ ভট্টাচার্য তাদের পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে কলকাতায় পাড়ি জমান। তার ঠিক কিছু দিনের মধ্যে মন্দিরের কষ্টি পাথরের আসল শিবলিঙ্গটি চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে একটি পাথরের শিবলিঙ্গ বসানো হয়। হেমন্ত ভট্টাচার্যের চার ছেলের মধ্যে এদেশেই থেকে যান মেজো ছেলে হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি দেশেই মৃত্যুবরণ করেছেন। নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের দুই ছেলে-- বড় ছেলে দুলাল ভট্টাচার্য আর ছোট ছেলে গোপাল ভট্টাচার্য। বড় ছেলে দুলাল ভট্টাচার্য্য দেশান্তরিত হয়ে ভারতে গেলেও ছোট ছেলে গোপাল ভট্টাচার্য বাংলাদেশে বড় পদে চাকরি করেছেন এবং মাগুরাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।

কালের আবর্তে মন্দিরটি ধবংসের দ্বার প্রান্তে গেলেও গ্রাম এবং পার্শবর্তী গ্রামের মহিলা ভক্তরা প্রতিবছর বিভিন্ন পর্বে পুজার মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধা ভক্তি জানিয়ে আসছেন বলে স্থানীয়রা জানান।