নেত্রকোনা: “আমি গরীব মানুষ। মানুষের বাড়ীতে কাজ করে কোন মতে সংসার চালাই। মেয়ের চিকিৎসা করব কি দিয়া।” কেঁদে কেঁদে বলছিলেন নেত্রকোনার হাফিজা আক্তার। ১১ বছরের অসুস্থ শিশু কন্যা রিমুকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। চিকিৎসার অভাবে মরতে বসেছে রিমু। বাঁচতে চায় শিশু রিমু আক্তার।

নেত্রকোনার সদর উপজেলার ফচিকা গ্রামের তারেক মিয়ার শিশু কন্যা রিমু আক্তার। যে সময়টাতে খেলাধুলা করে বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটানোর কথা, সে সময় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বিছানায় ছটফট করছে সে। প্রায় তিন বছর আগে তৃতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করত রিমু। তখন সাথীদের সাথে খেলা করতে গিয়ে কপালে পাথরের ঢিলে আঘাত পায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা করার পর কিছুটা ভাল হয়। কিছুদিন পর আবার আঘাতের জায়গা ফুলে যায়। এরপর নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে ফুলা জায়গা কেটে দেয় ডাক্তার। কিছুদিন ভাল থাকার পরে আবার বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে কাটা জায়গা দিয়ে পানি(পুঁজ) বের হতে থাকে।


এ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য গেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য পরামর্শ দেয় ডাক্তার। এরপর প্রায় দুই মাস যাবত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে থাকে। সেখানে ভাল না হওয়ায় এক পর্যায়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেয় চিকিৎসক।

ঢাকা নেয়ার পর চিকিৎসা পরীক্ষা নীরিক্ষার পর বলে যে, ইনফেকশন হয়ে তার মাথার হাড়ে ছিদ্র হয়ে গেছে। পরে অপারেশন করার পর অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়। হাসপাতালে তিন মাসের বেশি সময় চিকিৎসা নেয়ার পর কিছুটা ভাল হওয়ায় নিজ বাড়ীতে চলে আসে।


প্রায় এক বছর ভাল থাকার পর আবার রিমুর মাথা ফুলতে থাকে এবং আগের মত পানি(পুঁজ) বের হতে থাকে। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য গেলেও করোনাসহ বিভিন্ন কারনে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি। এরপর থেকে বাড়িতে রিমু চিকিৎসার অভাবে মরতে বসেছে।

রিমুর মাতা হাফিজা আক্তার জানান, ‘বর্তমানে তাকে ছেড়ে নতুন সংসার করেছে তার স্বামী। তাদের তিন মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। এতে করে আয় রোজগারের কোন উপায় না থাকায় অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে হাফিজা। প্রায় এক বছর যাবত রিমু মাথার সামনের অংশ পচে গিয়ে পুঁজ বের হচ্ছে। ব্যাথায় যন্ত্রণায় বিছানায় সারাক্ষণ ছটফট করছে। চোখের সামনে সন্তানের এ অবস্থায় মায়ের চোখে শুধুই কান্না ছাড়া আর কিছুই নেই। এদিকে তার স্বামীও নতুন সংসার করে তাদের কোন খবর নিচ্ছে না।


তিনি আরো জানান, রিমুর মাথার সামনের অংশ ফুলে যাওয়ায় চোখেও কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। সারা রাত তাকে নিয়ে বসে থাকেন তিনি। মেয়ের চিকিৎসায় সবকিছু হারিয়ে সে এখন আর চিকিৎসা করাতে পারছেননা। ফলে চোখের সামনে মরতে বসেছে রিমু।

এ অবস্থায় রিমুকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

 


নয়ন বর্মন | নেত্রকোনা প্রতিনিধি