"ও স্যার! আমার মায়ের হাড্ডি গুলো খুইজ্জা দেন না স্যার!" কথাগুলো বলছিলেন চৌদ্দ বছর বয়সে অভাবের সংসারে হাল ধরা একজন কন্যা সন্তানের বৃদ্ধ বাবা।

‘আমার পোলার বাপ এতিম হইয়া গেল, এরে দেখবো কে, কে? ও স্যার আমার কিছুই লাগবো না, পোলার বাপটারে আইনা দ্যান।’ এমন অজস্র আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের, রুপগঞ্জের সেজান জুস এন্ড বেভারেজ প্রাঙ্গণ।

‘ঘটনার সূত্রপাত এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি’ জানিয়েছে প্রশাসন। তবে হঠাৎ করে আগুন ধরে ওঠে বিল্ডিংয়ে এবং সে সময় যারা কাজে নিয়োজিত ছিল তাদের আটকে রাখা হয় এবং নিচের গেট আটকে দেওয়া হয়। এই বলে যে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু আগুন যখন দাউদাউ করে জ্বলে তবুও যখন গেট খুলছিল না,  তখন তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে চারতলা থেকে লাফ দেয়। এমনটা বলছিলেন কোন রকমে জীবনে বেচে যাওয়া কয়েকজন শ্রমিক।

তাদের ভাষ্যমতে, আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ওখানে ছিলো না।

এই যে বায়ান্ন জন শ্রমিকের প্রাণ গেল আগুনে পুড়ে - এ দায় নিবে কে? কোন ক্ষমতাবলে তারা কারখানার নিয়ম না মেনে কারখানা চালায়? এদের কি ধরা-ছোঁয়া যায়?

এমনই প্রশ্ন উঠে আসছে বার বার। কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আজকে নতুন না।  ২০১৪ সালে এমনই ভাবে ঝলসে পুড়ে মরেছে শ্রমিক, ২০১০ সালে ঢাকার মিনা বাজারে নয়তলা কারখানায় আগুন ধরে ১১০ জন শ্রমিক পুড়ে কংকালসার হয়েছিল। স্বজনরা চিনতে ফরেনসিক এর সাহায্য নিয়েছিল। আজকেও তাই।

শ্রমিকদের এই নির্যাতন, অসহায়ত্ব, চরম মৃত্যু, এগুলো নিয়ে শুধু কোন ঘটনা ঘটলে দু-চারদিন টেলিভিশনে, সংবাদ মাধ্যমে খুবই সরগরম হয় তারপর আবার যা তাই। তারপর আবার শ্রমিকের পুড়িয়ে রক্তরস দিয়ে আবারও কোন কোম্পানি, কারখানা মালিক স্বাদের জুস তৈরী করবে। না তা হবে না।

সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং প্রকাশ্যে সাজা দিতে হবে। যেন শ্রমিকের জীবন দিয়ে ছিনিমিনি আর কেও না করতে পারে।


টিকেন্দ্র নাথ মন্ডল, প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ