কক্সবাজার: জেলার চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতালের অল্প দূরে রিংভং হাসিনা পাড়ায় বনবিভাগের খাস জমিতে গড়ে উঠেছে জন বসতি। সেখানে ১০ দিন আগেই (২৮ জানুয়ারি) বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান সুরেশ চন্দ্র শীল। ধর্মীয় সব নিয়ম মেনেই তার সৎকার করা হয়। এর পরবর্তী সময়ে সব নিয়ম পালনের জন্য বের হন সুরেশ চন্দ্র শীলের ৬ ছেলে ও ২ মেয়ে। কাল অর্থাৎ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ছিল তাদের পিতার শ্রাদ্ধের দিন। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে  ৮ ভাইবোন একসঙ্গে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসে ওপারে চলে যাওয়া বাবার মঙ্গল কামনায় শ্রদ্ধা ও আর্চনা করছিলেন। অর্চনায় মগ্ন অবস্থায় তাদেরকে চাপা দেয় একটি গাড়ি।

পরিবহন, ট্রাক, ব্যক্তিগত নাকি অন্য কোনো গাড়ি, এখনও জানতে না পারা যানবাহনের চাপায় ঘটনাস্থলেই চলে যায় চার ভাইয়ের প্রাণ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর ২ ভাই ও ২ বোনকে উদ্ধার করে নিকটস্থ খ্রিষ্টান হাসপাতালে নেওয়া হলে বেলা ১১টার দিকে আরও এক ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এই ৫ ভাইয়ের লাশ আনা হয়েছে নিহতদের বাড়ির উঠানে। আর তা দেখে ‘বাকরুদ্ধ’ হয়ে গেছেন ১১ দিন আগে স্বামী হারানো মানু বালা শীল (৬০)।
 
মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে সারি সারি সাজানো রয়েছে অনুপম শীল (৪৮), নিরুপম শীল (৪৫), দীপক শীল (৪০), চম্পক শীল (৩৮) ও স্মরণ শীলের (৪৬) লাশ। তাদের স্ত্রীরা বিলাপ করছেন জোরে জোরে। ছোট্ট ছেলেমেয়ে কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও মায়েদের সঙ্গে কাঁদছে। প্রতিবেশীরা এসে তাদের স্বান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মুসলিমরাও এসেছেন বাড়ির উঠানে। তারাও পরিচিত সুরেশ চন্দ্র শীলের ৫ছেলের একসঙ্গে মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন। এসবের মধ্যেই ‘বাকরুদ্ধ’ হয়ে বসে আছেন মানু বালা। ৫ ছেলের লাশ সামনে থাকলেও তার চোখে পানি নেই। কোনো কথাও বলছেন না, নড়াচড়াও করছেন না। তিনি এতটাই শোকাহত যে কান্নাও করতে পারছেন না।

এদিকে ৫ ভাই নিহতের খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান ও ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর। তারা শোকাহত পরিবারের সদস্যদের স্বান্ত্বনা দিতে এসে নিজেরাও শোকাহত হয়ে গেছেন। ইউএনও জেপি দেওয়ান গণসমাধ্যমকে বলেন, এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়। আর কিছু বলা নাই।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওসমান গণি মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে জানান, পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছায় নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই সৎকারের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের চাপা দেওয়া গাড়ির ড্রাইভার-হেলপারকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।


প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ