বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত দেশে সাংবিধানিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বীকৃতি দানে প্রচণ্ডভাবে বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হতে পারি কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে না। আমাদের রাষ্ট্র কি ধর্মভিত্তিক? যদি তা না হয় আমরা সংখ্যালঘুরা কারা? আমাদের স্টেটাস কি?

সংবিধানের ২(ক) ধারা অনুযায়ী-

 2A. The state religion: the state religion of the Republic is Islam, but the State shall ensure equal status and equal right in the practice of the Hindu, Buddhist, Christian and other religions.

এখানে একটা মুখ্য ও গৌন দুটি কথা আছে। এখানে মুখ্য ধর্ম হিসাবে ইসলাম। গৌন ধর্ম হিসাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গৌন শব্দটি অর্থে সংখ্যালঘুদের সনাক্ত করা হয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে ঐ শব্দের শেষে as religious minorities যুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু স্বীকৃতির জন্য।

Only words need to be added “as religious minorities"   at the end of the sentence.)

রানা দাশগুপ্তের মতে যারা সংবিধানে ২(ক) ধারা যুক্ত করেছেন তারা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী? বিএনপি, জাতীয় পার্টি এ ধারা সংযোজন করেছে এবং আওয়ামী লীগ এই সংবিধানের ধারাটি বজায় রেখেছে। তাহলে আওয়ামী লীগসহ সব দল, তারা কি সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী? রানা দাশগুপ্তের এ সাহস আছে ঐ দলগুলিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী দল বলে দাবী করার? তারা কি এ ধারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী হয়ে সংযুক্ত করেছে? তাহলে যারা এই এ ধারা যুক্ত করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী না হলে, আমরা সংখ্যালঘুরা যারা সংখ্যালঘু স্বীকৃতি সংবিধানে লিখে সংযুক্ত করার দাবি করলে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী হয়ে যায়? আপনি এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টানরাই কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে, বাকী সব দল এবং আমরা কি বিপক্ষে? আপনি জানেন, অপশক্তিকে উৎসাহিত করে যারা এ ২(ক) ধারা সংযুক্ত করেছে তারা লিখিতভাবেই  করেছে only did not spell and wrote the words “as Religious minorities”.

আমরা কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি না বিপক্ষ শক্তি তার সার্টিফিকেট কি রানা দাশগুপ্তের কাছ থেকে নিতে হবে? কোন অধিকার বলে তিনি সংখ্যালঘুদের দাবির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করতে পারেন?  তিনি কি মুক্তিযুদ্বের চেতনার এজেন্সি নিয়েছেন? তাঁর কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে? ধর্মীয় সংখ্যালঘু স্বীকৃতি দাবি করার জন্য তাঁর অনুমতি নিয়ে আমাদের কি কথা বলতে হবে? 

আপনিসহ আপনাদের সংঘটনের অনেকেই বাংলাদেশের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের  আইনজীবি ও বিচারপতি রয়েছেন।

আপনারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বলুন, সংবিধানের কোন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু শব্দটি উল্লেখ করা আছে? যদি তাই না থাকে আপনারাই বলুন আপনাদের সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ যে দাবিগুলির  কথা বলছেন- সংখ্যালঘু কমিশন, মন্ত্রণালয় গঠন, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আইন। সংবিধানের কোন ধারা বলে সরকারের মেনে নিতে যুক্তিযুক্ত?

এ দাবিগুলির পিছনে কতটুকু সাংবিধানিক যৌক্তিকতা আছে তা কি একবার সংবিধান ঘেটে ভেবে দেখেছেন। যদি সাংবিধানিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু না হন। 

আপনি নিজেই একজন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার আন্দোলনের অরাজনৈতিক সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি। আপনার জানার কথা যে কোন সরকার সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয় ও কমিশন এ দাবীগুলি মেনে নিলে, যারা এ দাবীগুলির বিরোধী তারা তাৎক্ষনিকভাবে এ দাবীর বিরোধীতা করে আইনের আশ্রয় নিয়ে বাতিল করতে সচেষ্ট হবে। যেহেতু সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক কোন ভিত্তি নাই, এবং সংবিধানে সংখ্যালঘু বলে কোন শব্দ নাই। ভবিষ্যতে যে কোন সরকার পরিবর্তন হলেই, ক্ষমতায় এসে পরবর্তী সরকার গঠন করার এক ঘণ্টার মধ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন বাতিল করে দেবে। এটা কি আপনারা বুঝেন না? এ ধরনের বিচারপতি ও আইনজীবি আপনাদের দলে নাই?

এটাই কি আপনাদের সংখ্যালঘু নিরাপত্তার জন্য একমাত্র স্থায়ী সমাধান? এ বুদ্ধিমত্তা নিয়েই সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে নেমেছেন? আপনাদের বিচক্ষণতা ও বিচারবুদ্ধি সম্বন্ধে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা আমাদের নাই। আপনাদের বিচারবুদ্ধি মুল্যায়ন করার দায়ভার সংখ্যালঘু জনগণের। 

বাংলাদেশে কয়েকটি সংখ্যালঘু সংগঠন গত শুক্রবার (৪টা ফেব্রুয়ারি) প্রেসক্লাবের সামনে সংখ্যালঘু স্বীকৃতির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। ইতোপূর্বে আমেরিকাতে বাংলাদেশের এম্বাসেডর (ওয়াশিংটন ডি সি র) শহীদুল ইসলাম সাহেব এর সাথে গত ১৯ শে জানুয়ারি  জুম মিটিংয়ে বৈঠক করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে সভা করে, ঐ মিটিংয়ে আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া সহ দেশবিদেশের ৬০ জন নেতানেত্রী বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে যোগদান করেন।  বাংলাদেশ, আমেরিকা,  কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারাও এ দাবিগুলিতে একমত হয়ে যোগদান করেছেন। ঐ সভায় আমরা সংখ্যালঘু স্বীকৃতি এবং ৬৪টি জেলা থেকে একজন করে সংখ্যালঘু জনপ্রতিনিধি, মনোনয়ন দিয়ে পৃথক নির্বাচন এর দাবি প্রধান মন্ত্রীর কাছে জানানো হয়।

মাননীয় পররাস্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, এগুলি অনেক বড় বড় ব্যাপার, যেগুলির উত্তর ও সমাধান উনার একার পক্ষে চট করে দেয়া সম্ভব নয়। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন দাবিগুলি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে সত্বর অবশ্যই পেশ ও আলোচনা করবেন। 

একই দিনে আমরা ৫ই ফেব্রুয়ারী বিকাল ৫ টায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স্বীকৃতি দাবীর সমর্থনে নিউইয়র্কে অবস্হিত দিব্যদাম মন্দিরে বেশ কয়েকটি সংঘটনের সন্মিলিতভাবে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন আয়োজন করেছিলাম।

আমরা কেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু স্বীকৃতি দাবী করছি? এই দাবীর সমর্থনে কেন আমেরিকা কানাডা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আপনাদের সংঘটন ঐক্যপরিষদসহ বাংলাদেশের অনেক সংখ্যালঘু অধিকারের দল এ দাবীর সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে আন্দোলনে নেমেছে? 

কারণ, এ দাবী অর্জনের মাধ্যমে আমাদের অন্য সকল দাবি অর্জিত হবে, বাস্তবায়ন করার পথ তৈরী হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু স্বীকৃতির সংগে সংগে সংখ্যালঘুদের যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। (Minorities right and Representation will be guaranteed by 1992 UN declaration of Minority Rights. Bangladesh was one of the signatories of that UN minorities right bill) জাতিসংঘের এই আইনের আলোকে পার্লামেন্টে পৃথক আসন নিশ্চিত হবে, মন্ত্রনালয় ও সংখ্যালঘু ফাউন্ডেশন, আনুপাতিক হারে বাজেটের অর্থ দাবী করা যাবে। সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আইন গঠন, সহায় সম্পত্তি পুনর্রুদ্ধার করার জন্য প্রক্রিয়া সহজ হবে। এমনকি আপনাদের প্রত্যেকের যুক্তিসংগত দাবীগুলি আদায় করা যাবে। যে দাবীগুলির কথা বলছেন সবই পাওয়া যাবে যদি সংখ্যালঘু স্বীকৃতি পাওয়া যায়।

৩ কোটি সংখ্যালঘুর দাবীকে  মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বলে যে অপরাধ করেছেন, সংখ্যালঘুদের দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়ে অবমাননা করে যে লিখিত স্টেইটমেন্ট দিয়ে বিরোধিতা করেছেন । আপনাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সংখ্যালঘুদের বিরোধিতা না করে, যদি পক্ষে থাকতে না পারেন তাহলে বিরোধিতা করবেন না। সাধারন মানুষের দাবী নসাৎ করে দিবেন না। 

এটাই আপনার কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ।

 

বিদুৎ সরকার

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠক

সেক্রেটারি  জগন্নাথ হল এ্যালামনাই এসোসিয়েশন, , যুক্তরাষ্ট্র

চেয়ারম্যান বাংলাদেশ হিন্দু বুড্ডিস্ট খ্রীস্টান ইঊনিটি কাউন্সিল

কো-চেয়ারম্যান- বাংলাদেশ আমেরিকান রিপাবলিক্যান এলায়েন্স

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।