ঢাকাঃ গণমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, গতকাল থেকে সবখানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে টিপ। কপালে টিপ পরার কারণে শনিবার (২ এপ্রিল) হেনস্তার শিকার হয়েছেন তেজগাঁও কলেজের এক নারী প্রভাষক। হেনস্তাকারীর ভূমিকায় ছিলেন একজন পুলিশ সদস্য।

ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। সংসদে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বিষয়টি। এ নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সদস্য, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। 

তিনি বলেন, টিপ পরা বা না পরা নারী সমাজের অধিকার, তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের কটূক্তি বাংলাদেশের তথা সকল নারী সমাজের জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।

একই সঙ্গে টিপ পরায় কলেজ শিক্ষিকাকে উত্ত্যক্তকারী অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

রোববার (৩ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোন সংবিধানে, কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবে না। এখানে হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এমনকি সে বিবাহিত না বিধবা সেটা বিষয় নয়...একটি মেয়ে টিপ পরেছে। তিনি একজন শিক্ষক। রিকশা থেকে নামার পর দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার তাকে টিজ করেছে।

সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, শনিবার ফার্মগেটে একজন কলেজ শিক্ষিকা যখন রিকসা থেকে নেমে তার কলেজের (তেজগাঁও) দিকে যাচ্ছিলেন তখন সেখানে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের (পুলিশ) পক্ষ থেকে তাকে সুস্পষ্টভাবে ইভটিজিং করা হয়েছে। তিনি যখন এর প্রতিবাদ করতে গেছেন তখন তাকে তুই-তুকারী করা হয়েছে। এমন কুৎসিত বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে, যা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারেননি। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।

এই সংসদ সদস্য বলেন, আমি কোন দল রিপ্রেজেন্ট করি এগুলো তার ঊর্ধ্বে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন, মানুষ আগে, সবাই সমান, মানুষের অধিকার সবার আগে। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা বলেছেন, মানুষকে ভালো বাসতে হবে, তার কথা বলার অধিকার, তার জীবন যাপনের অধিকার, তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলাও করেছেন ওই শিক্ষিকা। আমি অনুরোধ করবো যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়টি দেখেন, তারা যদি এখনো এ বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে থাকেন, তারা যেন ইমিডিয়েটলি এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেন। আশা করি তারা দ্রুত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন ও পদক্ষেপ নেবেন।

উল্লেখ্য, শনিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কলেজে যাচ্ছিলেন তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। এ সময় হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন- ‘টিপ পরছোস কেন’ বলেই বাজে গালি দেন তাকে। ওই ব্যক্তির গায়ে ছিল পুলিশের পোশাক।

এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে উল্টো প্রভাষকের পায়ের ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে চলে যান ওই ব্যক্তি। এরপর শেরেবাংলা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ড. লতা সমাদ্দার।


প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ