কিশোরগঞ্জ : প্রেম নিবেদনে সাড়া না দেয়ায় অবশেষে কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ করেছে আজিজুল হক সানি নামে এক যুবক ও তার সঙ্গীরা।
সোমবার (১লা জুন) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে গ্রামের বাড়ি জেলার কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় সানি নামের ওই যুবক কয়েকজন বন্ধুসহ ওঁৎ পেতে থেকে বাড়ির সামনে থেকে জোরপূর্বক ওই কিশোরী কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ করে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে বিদ্যুৎ গতিতে পালিয়ে যায়। আশপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিশোরীকে নিয়ে হাওয়া হয় ওই যুবক দল।
ঘটনা জানাজানি হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রাম জুড়ে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২ রা জুন) সকালে অপহৃত কলেজ ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে কটিয়াদী মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা রুজু করেছেন। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা পূজা উদযাপন কমিটি ও জেলা মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
তারা অবিলম্বে ওই অপহৃত কিশোরী কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জেলার কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের আচমিতা গ্রামের এক ওষুধ ব্যাবসায়ীর মেয়ে ওই কিশোরী আচমিতা জর্জ ইন্সটিটিউশন থেকে এসএসসি পাশ করে কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হয়।
এ স্কুলে পড়ার সময় একই স্কুলের শিক্ষার্থী একই উপজেলার চারি পাড়া গ্রামের সফির উদ্দিনের ছেলে আজিজুল হক সানি বিভিন্ন সময় অপহৃতাকে রাস্তাঘাটে উত্যক্ত ও প্রেম নিবেদন করতো।
এ ঘটনা জানাজানি হলে অপহৃতার বাবা সানিকে এ ব্যাপারে বাঁধা নিষেধের পাশাপাশি তার পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে বিচারপ্রার্থী হন।
এতে সানি নামের ওই যুবক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সুযোগ খুঁজে বেড়ায়।
পরবর্তীতে এসএসসি পাশ করে কিশোরগঞ্জ শহরে অবস্থান করে সেখানকার সরকারি গুরুদয়াল কলেজে লেখাপড়া করছিল ওই কিশোরী। করোনা আতঙ্কে কলেজ বন্ধ হয়ে পড়লে গ্রামের বাড়িতে এসে অবস্থান করছিলো সে। এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে সানি নামের ওই যুবক বাড়ির আশপাশে ঘুরাঘুরি শুরু করে। সুযোগ মতো ওই কিশোরীকে সামনে পেলেই প্রেম নিবেদন করতো।
কিন্তু, এতে কোনো সাড়া না পেয়ে তাকে প্রকাশ্যে হুমকি প্রদানের পাশাপাশি ফোন করে এবং তার মোবাইল নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে আসছিল।
সোমবার (১ লা জুন) সন্ধ্যা ৭ টার সময় ওই কিশোরী প্রয়োজনে বাড়ির সামনে গেলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সানি ও তার সঙ্গে থাকা অজ্ঞাত পরিচয়ের ৩/৪ যুবক ফিল্মি কায়দায় মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে।
আশপাশের লোকজন কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্ত দল বিদ্যুৎ গতিতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে পালিয়ে যায়।
আশপাশের লোকজন নিয়ে সারারাত খোঁজাখুঁজি করেও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি কিংবা খুঁজে পায়নি।
কিশোরগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন এবং জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া রাণী ভৌমিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওই কিশোরী অপহৃত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে অপহৃতাকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রের সকলকে গ্রেফতার দাবি করেছেন তারা।
অপহৃতার বাবা জানান,এ ঘটনার পরপরই পুলিশকে ঘটনা জানানো হয় এবং আজ মঙ্গলবার সকালে মামলা রুজু করেন তিনি। এ দীর্ঘ সময় পরও মেয়েকে ফিরে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন তিনি।
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এম এ জলিল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রেম সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলেই মনে হচ্ছে।
অপহৃতাকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রের সকলকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছেন ওসি এম এ জলিল।
অর্জুন কর্মকার, নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাদেশদর্পণ.কম