নেত্রকোনা:নেত্রকোনা জেলা শহরস্থ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শবদেহ মহাশ্মশানে নেয়ার জন্য 'শেষযাত্রা' নামক পুষ্পরথের(ব্যাটারি চালিত ভ্যান) যাত্রা শুরু হয়েছে। ফলে এখন থেকে আর কাঁধে করে শবদেহ বহন করতে হবে না পরলোকগত'র পরিবার ও স্বজনদের।
নেত্রকোনা পৌর শহরের অভ্যন্তরে সনাতনী সম্প্রদায়ের কেউ পরলোকগমন করলে শশ্মানঘাট এলাকার অপ্রশস্ত সড়কের কারণে,শবদেহ চকপাড়াস্থ পৌর মহাশ্মশানে নিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হয় ভূক্তভূগীদের।গাড়ি প্রবেশের অনুপযোগী সরু এই সড়কটি আজ পর্যন্ত কেউ প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়নি। ফলে দীর্ঘপথ বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে শবদেহ বহন করে নিয়ে যেতে হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে জেলা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী স্বর্গীয় কালি কুমার মজুমদারের পরিবার 'শেষযাত্রা' নামক ব্যাটারি চালিত ভ্যান তৈরী করে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাই এখন থেকে মৃতের পরিবারগুলো দুর্ভোগ ও দুর্দশা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা চেম্বার অফ কমার্সের সদস্য ও স্বর্গীয় কালি কুমার মজুমদারের ছেলে সুজিত মজুমদার জানান, "দীর্ঘদিন যাবৎ শবদেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যে পরিবারগুলোর জনবল কম তাদের পক্ষে মৃতদেহ কাঁধে করে শশ্মানে নিয়ে যাওয়া আরো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই নিজ উদ্যোগে প্রায় দু লাখ টাকা ব্যায়ে একটি স্টিলের খাটিয়াসহ ব্যাটারি ইঞ্জিনযুক্ত ভ্যান তৈরী করে দিয়েছি।' তিনি আরোও জানান, তাঁর স্বর্গীয় পিতার নামে বাহনটি উৎসর্গ করা হয়েছে। এবং এর নাম দেয়া হয়েছে 'শেষযাত্রা'। বাহন টি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাটপট্রি সার্বজনীন মন্দির কমিটিকে প্রদান করা হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী যে কেউ চাইলেই এর সেবা নিতে পারবেন।তবে এই 'শেষযাত্রা' পুষ্পরথের চালককে পাঁচশত টাকা প্রদান করতে হবে। এই বাহনের গায়ে কয়েকটি মোবাইল নম্বর দেয়া আছে, সেগুলোর যে কোন নম্বরে ফোন করলে বা পাটপট্রি মন্দিরে যোগাযোগ করলে যে কোন সময় তা গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। যে কেউ শবদেহ জেলা সদরের বাইরে নিয়ে যেতে চাইলেও 'শেষযাত্রা' কর্তৃপক্ষ তাতে সহযোগীতা করবে। বাহনটির আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এর চারপাশ পুরু কাঁচের বাক্স দিয়ে বিশেষ কায়দায় ঢেকে দেয়া হয়েছে,ফলে শবদেহ পরিবহণের সময় তা পরিবেশ বান্ধব ভূমিকা পালন করবে। বড় ভাইয়ের শবদেহ 'শেষযাত্রা'য় নিয়ে মহাশ্মশানে এসেছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ী দীপক রায়। তিনি বলেন, তার বাসা থেকে শ্মশানের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। এতটা দূর থেকে খাটিয়া কাঁধে করে শবদেহ নিয়ে আসাটা অনেক কষ্টকর এবং সেইসাথে সময়ের ও অপচয় হয়।
এই 'শেষযাত্রা'র সেবা নেওয়ায় তার এই দুটোই লাঘব হয়েছে।এর উদ্যোক্তা ও পরিচালনা কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। এমন একটি মানবিক ও মহৎ উদ্যোগ নেয়ার কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রশংসায় ভাসছেন স্বর্গীয় কালি কুমার মজুমদারের পরিবার। নয়ন বর্মন নেত্রকোনা প্রতিনিধি