ঢাকা:কক্সবাজারের চকরিয়ায় মৃত বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ফেরার পথে বেপরোয়া গতিতে চলমান পিকআপের চাপায় ৫  ভাইয়ের নির্মম মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঘাতক পিকআপের চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুল (২২)কে এক বছর পালিয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন মালিক। গতকাল (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘাতক পিকআপ চালককে গ্রেফতার করে র‌্যাব।


ওই দুর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত হয় তাদের ভাই রক্তিম সুশীল এবং বোন হীরা সুশীল। বর্তমানে রক্তিম সুশীল চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে।


শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।


ঘটনার বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি নিহতদের পিতা সুরেশ চন্দ্র সুশীল বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে পূজা শেষ করে তারা ৯ ভাই-বোন চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট বাজারের নিকট রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় ভোর ৫ টার দিকে কক্সবাজারমুখী বেপরোয়া গতিতে চলমান একটি পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মূলসড়ক থেকে নামতে গিয়ে তাদের চাপা দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। 


র্যাব জানায়, ওই ঘটনায় নিহতদের ভাই প্লাবন সুশীল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পিকআপ চালককে আসামি করে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর অভিযানে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় জড়িত ঘাতক পিকআপ চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।


কমান্ডার মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত পিকআপের চালক সাইফুল নিহতদেরকে গাড়ি চাপা দেওয়ার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত সাইফুল প্রাথমিক জানায় সে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে আনুমানিক ৫ টায় তারেক ও রবিউল নামক দুইজনসহ চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে সবজি বোঝাই পিকআপ নিয়ে সে রওনা করে। রাস্তায় অধিক কুয়াশা থাকার সত্বেও  চালক সাইফুল দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দেয়ার জন্য বেপরোয়া গতিতে পিকআপটি চালাচ্ছিল। 


র্যাব মুখপাত্র বলেন, অধিক কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পাড় হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদেরকে চালক সাইফুল দূর থেকে লক্ষ্য করতে পারেনি। গাড়ীর অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি সে নিয়ন্ত্রণে না করতে পেরে দুর্ঘটনাটি সংঘটিত করে। দুর্ঘটনার সময় তার সাথে পিকআপ মালিকের ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউল ছিল। 


তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি প্রায় ৬৫-৭০ কিঃ মিঃ/ঘণ্টা গতিতে চলছিল এবং চালক গাড়ি থামানোর জন্য ব্রেক করলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রায় ১০০ ফুটের মতো সামনে চলে যায়। পরবর্তীতে চালক পিকআপ থেকে নেমে নিহতদের দেখতে আসলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে সে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে।


র‌্যাব জানায়, পিকআপ চালক সাইফুলের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও দীর্ঘ ২ বছর যাবত সে পিকআপ, চাঁন্দের গাড়ী ও ৩ টন ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরণের গাড়ি চালানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। দুর্ঘটনার ১ সপ্তাহ পূর্বে সে পিকআপটি মালিকের নিকট থেকে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি ভিত্তিতে চালানো শুরু করে।


কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, এই দুর্ঘটনার পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাইফুল মালুমঘাট বাজারের একটি স্থানে গাড়িটি থামিয়ে মালিককে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানায়। গাড়িটির মালিক তাকে পিকআপটি পরবর্তী কোন এক স্টপেজে রেখে লোকাল বাসে করে তার সাথে দেখা করতে বলে। মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃত সাইফুল ডুলাহাজরায় এসে পিকআপটি রাখে এবং লোকাল বাসে করে চকরিয়া গিয়ে মালিকের সাথে দেখা করে। 


পিকআপের মালিক মাহমুদুল তাকে নূন্যতম ১ বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দেয় এমন তথ্য জানিয়ে গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা বলেন, সে প্রথমে তার পূর্ববর্তী চাকুরি স্থল বান্দরবানের লামার রাবার বাগানে আত্মগোপনে যায়। পরবর্তীতে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসে।


দুর্ঘটনা পরবর্তীতে পিকআপের মালিক, তার ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউল আত্মগোপনে। গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।




প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ